দেহঘড়ি

ম্যাপল সিরাপ কতটা স্বাস্থ্যকর? 

চিনির বিকল্প ম্যাপল সিরাপ। চিনির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে অনেকেই ম্যাপেল সিরাপ ব্যবহার করে থাকেন। যারা মিষ্টি খাওয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছেন তাদের কাছে ম্যাপল সিরাপ জনপ্রিয়। এমনকি মধুর বিকল্প হিসেবেও এই সিরাপের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এই সিরাপ অনেকের কাছে তৃপ্তিদায়ক খাবার হতে পারে। শুধুই ব্রেকফাস্ট নয় যেকোনো মিষ্টি বানাতে ব্যবহার করতে পারেন ম্যাপল সিরাপ। বারবিকিউ সস হিসেবেও ম্যাপল সিরাপ ব্যবহার করতে পারেন।

কাউকে ম্যাপল সিরাপ খেতে পরামর্শ দেয়া হলে তার মনে এই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে এটা কতটা স্বাস্থ্যকর? অথবা এটা খেলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে নাতো? স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এক কোয়ার্টার কাপ ম্যাপল সিরাপে প্রায় ২০০ ক্যালরি, ০ গ্রাম প্রোটিন, ৫৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ০ গ্রাম ফ্যাট, ০ গ্রাম ফাইবার ও ৫৩ গ্রাম চিনি রয়েছে। ম্যাপল সিরাপ খেলে শরীরে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট যাবে। কিন্তু প্রোটিন, ফ্যাট ও ফাইবার পাবেন না বললেই চলে। এটা মনে রাখবেন যে, সিরাপটিতে প্রধানত কার্বোহাইড্রেট ও চিনি থাকে। তাই বলে এই সুইটেনারে অন্যকোনো পুষ্টি নেই তা নয়। এতে প্রচুর মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এতে ৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৭৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১.৮ মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজ ও ১.০৮ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যাবে। এসব পুষ্টিগুণই ম্যাপল সিরাপকে পরিশোধিত সাদা চিনির ভালো বিকল্প করেছে।

২০১৪ সালে প্লান্ট ফুডস ফর হিউম্যান নিউট্রিশনে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডার সাউদার্ন অন্টারিও থেকে ম্যাপল সিরাপের ৩৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দেখা গেছে, ডার্কার ম্যাপল সিরাপে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এছাড়া ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও টোটাল মিনারেলও বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে। ম্যাপল সিরাপের অন্যতম তারকা উপাদান হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কানাডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস পাবলিকেশনসে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, এই সুইটেনারে ডজনখানিক অনন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এক টেবিল চামচ ম্যাপল সিরাপ থেকে দৈনিক প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজের ৩০ শতাংশ পেয়ে যাবেন। সিরাপটিতে অল্প পরিমাণে জিংকও রয়েছে। এই সিরাপের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫৪, যা পরিশোধিত সাদা চিনির (৬৫) চেয়ে কম। এর ফলে ম্যাপল সিরাপ পরিশোধিত সাদা চিনির তুলনায় ধীরে রক্ত শর্করা বৃদ্ধি করে।

এটা ভুলে গেলে চলবে না যে যেকোনো চিনিই রক্ত শর্করাকে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে দিতে পারে। তাই চিনিযুক্ত খাবার সীমা ছাড়িয়ে খাওয়া উচিত নয়। ম্যাপল সিরাপের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সিরাপটিকে অ্যাডেড সুগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন পুরুষকে ৯ টেবিল চামচ ও নারীকে ৬ টেবিল চামচের বেশি অ্যাডেড সুগার খেতে নিরুৎসাহিত করেছে। সার্কুলেশনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, গবেষণায় অতিরিক্ত অ্যাডেড সুগার খাওয়ার সঙ্গে স্থূলতা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্থূলতা সম্পর্কিত ক্যানসারের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। সবদিক বিবেচনা করে ম্যাপল সিরাপকে খুবই স্বাস্থ্যকর খাবার বলা যাবে না। তবে এটাকে সাদা চিনির তুলনায় ভালো বলা যেতে পারে। আপনার খাবারের ওপর ম্যাপল সিরাপ ঢেলে মুখরোচক করতে পারেন। সিরাপটির বোতল খুলে ফেললে রেফ্রিজারেটরে রেখে সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। রেফ্রিজারেটরে না রাখলে ছত্রাক জন্মাবে।