সাইফ স্পোর্টিংয়ের প্রথম নাকি বসুন্ধরা কিংসের দ্বিতীয়! ওয়ালটন ফেডারেশন কাপের ফাইনালের আগে চলছিল হিসাব নিকাশ। শেষ পর্যন্ত মাঠের বাইরের অঙ্কের সমাধান করে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতলো বসুন্ধরা কিংস। দুই দলের মধ্যে তীব্র লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি হাসলো তারা।
১-০ গোলে সাইফকে হারিয়ে ট্রফি নিজেদের করে নেয় বসুন্ধরা। বিরতির পর একমাত্র গোলটি করেন রাউল অস্কার বেসেরা। আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন বসুন্ধরার গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। দারুণ দক্ষতায় কয়েকবার বল বাঁচিয়ে তিনি দলকে এনে দেন দ্বিতীয় ট্রফি।
বিকেলের মিষ্টি রোদে ফাইনালের মঞ্চে মুখোমুখি লড়াইয়ে নামে বসুন্ধরা-সাইফ। ফাইনালকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ছিল বেশ সরগরম। দুই পাশের দুই গ্যালারি দখলে নেয় বসুন্ধরা-সাইফের সমর্থকরা। শুরু থেকেই দুই দল মেতে উঠে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে। মাঠের ফুটবলের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতেও।
ম্যাচ শুরুর চার মিনিটেই গোল পেয়ে যায় বসুন্ধরা। তবে অফসাইডে বাতিল হয় গোলটি। ১৬ মিনিটের সময় সাইফের গোলরক্ষককে পাপ্পু হোসাইনকে একা পেয়েও জালে বল জড়াতে পারেননি বিশ্বনাথ ঘোষ। মাঝ মাঠ থেকে কাউন্টার অ্যাটাক করে বসুন্ধরা। জোনাথনের মাপা শট সরাসরি যায় সাইফের ডি বক্সে বিশ্বনাথের পায়ে। একা পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি বিশ্বনাথ।
দুই মিনিট পরে বসুন্ধরার ডি বএক্সে থেকে সাইফের কেনেথ বল বাড়িয়ে দেন জন ওকোলিকে। কিন্তু ওকোলির শট চলে যায় গোলপোস্টের ওপর দিয়ে। সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি প্রথমবার ফাইনালে ওঠা সাইফ। ২০ মিনিটের সময় গোলরক্ষক জিকোর দারূণ দক্ষতায় গোল খাওয়া থেকে রক্ষা পায় বসুন্ধরা।
মাঝ মাঠ থেকে অসাধারণ ড্রিবলংয়ে বল নিয়ে বসুন্ধরার দিকে ছুটে যান ওকোলি। ডি বক্সের বাঁ দিক থেকে বাড়িয়ে দেন ফাহিমকে। কিন্তু জিকো এগিয়ে ব্যর্থ করে দেন সাইফের আক্রমণ। ২৮ মিনিটের সময় মাঝ মাঠের একটু সামনে থেকে কোনাকুনি শট নেন বসুন্ধরার ফরোয়ার্ড রিমন হোসেন। কিন্তু তার শট সাইফের গোলরক্ষক পাপ্পুকে ফাঁকি দিতে পারেনি।
৩২ মিনিটে আবারও সুযোগ পায় বসুন্ধরা। ডান দিকে থ্রো করে খালেদ। এরপর সাইফের রক্ষণভাগ বল ভালোভাবে ক্লিয়ার করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ডি বক্সের সামনে আবার বল পেয়ে শট নেন জোনাথন। তবে বল চলে যায় গোলপোস্টের পাশ দিয়ে। বিরতির যোগ করা সময়ে বসুন্ধরার ডি বক্সের বাম পাশে হ্যান্ডবল হলে ফ্রি কিকের বাঁশি বাজান রেফারি। যোগ করা সময়ে রহমত মিয়ার দারুন শট রুখে দেন জিকো।
প্রথমার্ধে দুই দলই খেলে দারণ। কিন্তু গোলের দেখা পায়নি গতবারের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংবা প্রথমবার ফাইনালে ওঠা সাইফ। বিরতি থেকে ফেরার তিন মিনিট পরেই এগিয়ে যেতো পারতো সাইফ। প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে শট নেন রহমত মিয়া। সবাইকে ফাঁকি দিতে পারলেও গোলরক্ষক জিকোকেই যেনো ফাঁকি দিতে পারেননি সাইফের ফুটবলাররা। বরাবরের মতো এবারো শট রুখে দেন জিকো।
বিরতির পর ৫২ মিনিটের সময় এগিয়ে যায় বসুন্ধরা। ব্রাজিলিয়ান-আর্জেন্টিনার মেলবন্ধনে গোলটি পায় তারা। মাঝ মাঠ থেকে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবসন ডি সিলভার পাস সরাসরি যায় সাইফের ডি বক্সে থাকা আর্জেন্টাইন বেসেরার পায়ে। এবার আর ভুল করেনি বসুন্ধরা, মাঠ গড়ানো শটে গোলরক্ষক পাপ্পুকে ফাঁকি দিয়ে বল জড়ায় সাইফের জালে।
এরকিছুক্ষণ পরেই সুযোগ পায় সাইফ। বাঁ দিক থেকে সাজ্জাদ হোসাইন একাই বল নিয়ে এগিয়ে যান বসুন্ধরার ডি বক্সের দিকে। কিন্তু ভুলে পাস দিয়ে বসেন বসুন্ধরার ডিফেন্ডারের কাছে। ৬৯ মিনিটে বসুন্ধরাকে রক্ষা করেন জিকো। ডি বক্সের বাইরে থাকা কেনেথের বুলেট গতির শট লাফিয়ে উঠে হাতের আলতো ছোঁয়ায় পাঠিয়ে দেন গোলবারের ওপর দিয়ে। এর চার মিনিট পরেই আবারও আক্রমনে আসেন কেনেথ। এবার তার বাঁ পায়ের শট চলে যায় বার ঘেষে।
৮৬ মিনিটে ডি বক্সের ডান কোন থেকে কেনেথের হেড দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন জিকো। মিনিট না পেরোতেই ওকোলির শট ঠেকিয়ে বসুন্ধরাকে জিকো রক্ষা করেন। বারবার চেষ্টা করেও আর গোলের দেখা পায়নি সাইফ। ফুটবলের রাজত্ব পুনরায় দখল করে বসুন্ধরা।