খেলাধুলা

ঘূর্ণি দিচ্ছে সম্ভাবনার উঁকি 

শেষ ভালো যার সব ভালো তার। ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে এই বুলি আওড়াতে পারে বাংলাদেশ। যদিও খেলার এখনো দুই দিন বাকি এখনো ‘শেষ’ বলার কোনো সময় আসেনি। তবে তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে শের-ই-বাংলায় দেখা গেছে চেনা বাংলাদেশ। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের হতশ্রী পারফরম্যান্স ছিল কদর্য। স্পিন ত্রয়ী নাঈম-মিরাজ-তাইজুলদের ঘূর্ণিতে স্বাগতিক শিবিরে দেখা গেছে প্রাণের সঞ্চার। তাতে ঘুরে দাঁড়ানোর সবুজ সংকেত দিয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। দিচ্ছে সম্ভাবনার উঁকি।

১১৩ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে যোগ করে ৪১ রান। আলোক স্বল্পতার কারণে ৭ ওভার কম খেলা হয়েছে। ক্রিজে আছেন বাংলাদেশকে ব্যাট হাতে ভোগানো এনক্রুমার বোনার ৮ ও জোমেল ওয়ারিক্যান ২ রানে। ওয়ারিক্যান নেমেছেন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে।

বোলিংয়ে বাংলাদেশকে সাফল্য পেতে ১৪ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। চতুর্থ ওভারে নাঈম হাসানের বলে বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট। রিভিউ নিয়েছিলেন তবে কাজ হয়নি। এরপরই শেন মোসলেকে ফিরিয়ে রেকর্ড বুকে নাম লেখান মেহেদী হাসান মিরাজ। একটু রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে চেয়েছিলেন মোসলে, কিন্তু বল হালকা বাউন্স করে তার ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় মোহাম্মদ মিথুনের হাতে। 

এই উইকেট দিয়ে দেশের ক্রিকেটে দ্রুততম একশ টেস্ট উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন মিরাজ। ৪১ ইনিংসে তিনি এই রেকর্ড গড়েন। এতদিন এই রেকর্ড দখলে রেখেছিলেন তাইজুল। ৪৪ ইনিংসে তাইজুল উইকেটের সেঞ্চুরি করেছিলেন। এ ছাড়া সাকিব আল হাসান ৪৬ ও মোহাম্মদ রফিক নেন ৪৮ ইনিংসে। একশ উইকেটের মধ্যে মিরাজ দেশের মাটিতে নিয়েছেন ৭১টি। বাকি উইকেটগুলো বিদেশের মাটিতে।

দিনের খেলা শেষ হওয়ার ৪ অভার আগে তাইজুলের ঘূর্ণিতে ইনসাইড এজে ভেঙে যায় জন ক্যাম্পবেলের লেগ স্টাম্প। এভাবেই তিন স্পিনার টাইগার শিবিরে করেন প্রাণের সঞ্চার।

এর আগে ফলোঅন এড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে দিন শুরু করেন মুশফিক-মিথুন। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের করা দিনের ৬ নম্বর বলে কাভার দিয়ে দুর্দান্ত এক চার মেরে রানের সূচনা করেন মিথুন। কিন্তু তার শেষটা ভালো হয়নি। ১৪০ মিনিট ক্রিজে থেকে অফস্পিনার কর্নওয়ালের বল ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন। সামনে ডাইভ দিয়ে দারুণ দক্ষতায় বল তালুবন্দি করেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। তার ব্যাট থেকে আসে ৮৬ বলে ১৫। মিথুনের আউটে ভাঙে ৭১ রানের জুটি। 

গতকাল বিকেল থেকে শুরু হওয়া এই জুটিতে বড় কিছুর আশা দেখছিল বাংলাদেশ। দুজনে ১৩৯ মিনিট ক্রিজে ছিলেন এক সঙ্গে। মিথুনের আউটের ধাক্কা তখনো সামলে ওঠেনি স্বাগতিক দল। আবারও হন্তারক সেই কর্নওয়াল। তবে এ ক্ষেত্রে দায়টা বোলারের চেয়ে বেশি ব্যাটসম্যানের। আগের বলেই বিপদ থেকে বেঁচে যাওয়া মুশফিক এবার কান্ডজ্ঞানহীন শট খেলে ফেরেন সাজঘরে। তখনো ফলোঅন এড়ায়নি বাংলাদেশ। দরকার দীর্ঘ জুটি ঠিক তখনই মুশফিক খেললেন রিভার্স সুইপ। বল তার ব্যাটের নিচের অংশে লেগে চলে যায় কভারে। সোজা মায়ার্সের হাতে। ১০৫ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৫৪ রান করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

মুশফিক-মিথুন সাজঘরে ফেরার পর বাংলাদেশকে বাঁচান লিটন-মেহেদী। ১৫তম বাংলাদেশি হিসেবে লিটন ১ হাজার রান স্পর্শ করেন টেস্ট ক্রিকেটে। এরপর তুলে নেন ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফসেঞ্চুরি। দুজনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের উইকেট থেকে বঞ্চিত রাখেন ১৮৯ মিনিট। জুটি থেকে ২৫৫ বলে আসে ১২৬ রান। দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় সেশনে কোনো বিপদ ছাড়াই পার করে বাংলাদেশ। এই সেশনে ২৭ ওভারে ৯১ রান করে মুমিনুল হকের দল। 

তৃতীয় সেশনে ৭১ রানে লিটনের আউটে ভাঙে সপ্তম উইকেট জুটি। মুশফিক-মিরাজের সঙ্গে মিলিয়ে লিটন ক্রিজে ছিলেন ২১৩ মিনিট। ১৩৩ বলে ৭ চারের মারে তার ইনিংসটি সাজানো ছিল। চট্টগ্রাম টেস্টে দারুণ ব্যাটিং করা মিরাজও দিচ্ছিলেন ভালো কিছুর আভাস। তুলে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি। তবে লিটন আউটের পর মিরাজও এগোতে পারেননি বেশিদূর। ১৯৯ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৪০ বলে ৬ চারের মারে ৫৭ রান করেন মিরাজ। লিটনের আউটসহ তৃতীয় সেশনের ঘণ্টা পেরোনোর চার মিনিট আগে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এ সময় রান আসে মাত্র ৫৩।

তৃতীয় দিন বাংলাদেশকে বল হাতে নাচিয়েছেন কর্নওয়াল। শুরুর ২০ বলের মধ্যে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। এরপর ক্রিজে থিতু হওয়া ব্যাটসম্যান লিটনের উইকেটও যায় তার পকেটে। গতকালের একটি উইকেটসহ এই ইনিংসে কর্নওয়াল নিয়েছেন ৫ উইকেট। দুই পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও আজারি জোসেফ মিলে নেন বাকি ৫ উইকেট।

হাতে এখনো দুই দিন সময়। তৃতীয় দিনের শেষে দ্রুত ৩ উইকেট তুলে দারুণ কাজ করেছে বাংলাদেশ। মিরাজদের প্রয়োজন আর ৭ উইকেট। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উইকেটের কার্যকরিতা। স্পিনাররা পাচ্ছেন সুবিধা। 

কর্নওয়ালের ৫ উইকেটের সঙ্গে বাংলাদেশের স্পিন ত্রয়ীর ৩ উইকেট এই আভাসই দেয়। কাল দিনের শুরুতেই যদি আরও ২/৩ উইকেট নিতে পারে তাহলে মাচের নাটাই নিজেদের হাতে পাবেন রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। এখন বাংলাদেশের সামনে লিড আছে ১৫৪, যত দ্রুত আর কম রানে তাদেরকে আটকে রাখতে পারবেন মুমিনুলরা তত বেশি লাভ বাংলাদেশের।

শেষ বিকেলে ফিরে পাওয়া প্রাণ থাকবেতো কাল?