বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে পাবনায় দুদকের দায়ের করা ৫৯টি মামলার বিচারকাজ। ২০০১ সাল থেকে গত ২০ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি এসব মামলা।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাবনার সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান বিষয়টি জানিয়েছেন।
সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান জানান, উচ্চ আদালতে রিট করার কারণে মামলাজট বা আইনি জটিলতায় আটকে আছে এসব মামলা।
অপরদিকে, পাবনায় জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর কার্যক্রম। রয়েছে গাড়ি ও জনবল সংকটও। সীমাবদ্ধতার মাঝেও গত এক বছরে তদন্ত শেষে ১১টি মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল এবং দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা প্রায় চার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পাবনা থেকে পরিচালিত হয় পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার কার্যক্রম। দুদক কার্যালয়, পাবনা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এখন পর্যন্ত দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পাবনায় ৮১টি অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। আর তদন্তাধীন মামলা রয়েছে ২১টি। আর গত এক বছরে পাবনায় ১১টি দুর্নীতির মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছেন কর্মকর্তারা।
এছাড়া, দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন পর্যন্ত ৫৯টি মামলা আাদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ২০০১ সাল থেকে পুঞ্জিভুত এসব মামলা নিষ্পত্তি হয়নি গত ২০ বছরেও। তবে, অনেক চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের তদন্ত, মামলা দায়ের ও মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করেছেন পাবনায় কর্মরত দুদক কর্মকর্তারা।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর রুপপুর প্রকল্পের বালিশকাণ্ডের বিষয়ে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর পাবনায় চারটি মামলা রুজু করা হয়। যে মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। পাবনা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির একটি মামলার তদন্ত চলছে।
এছাড়া, উল্লেখযোগ্য মামলার মধ্যে মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদেরের বিরুদ্ধে বিচারাধীন রয়েছে ৬টি মামলা, বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল বাতেনের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ ব্যবহার করে সরকারি চাকরি লাভ ও সহায়তার অভিযোগে ৪২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে একটি মামলা ও সাঁথিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সেইসঙ্গে সাবেক মেয়র মিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা প্রায় চারকোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত নেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে দুদক কার্যালয়ের কর্মকাণ্ড। রয়েছে পরিবহণ ও জনবল সংকটও। নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও কোনো শক্তির কাছে মাথা নত না করে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছেন বলে দাবি দুদক কর্মকর্তাদের।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাবনার সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান জানান, আমরা দুর্নীতির অনুসন্ধান, কিংবা মামলার তদন্তকাজ ও গ্রেপ্তার করতে গিয়ে কোনো রাজনৈতিক বা পেশি শক্তির চাপ আসেনি। আমরা নিরপক্ষেভাবে তদন্তকাজ চালাতে পারছি। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করতে পারছি।
উপ-পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি ভবনে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। একটি গাড়ি দিয়ে দুইটি জেলায় অভিযান ও তদন্ত কাজ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। অফিসে রয়েছে জনবল সংকট। মঞ্জুরী করা মোট ১১টি পদের বিপরীতে মঞ্জুরী করা জনবল সংখ্যা ২৩ জন। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত রয়েছে ১৪ জন। এর মধ্যে ৬টি পদে ৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে উপ-সহকারী পরিচালক ৩ জন, সহকারী পরিচালক ১ জন, কোর্ট সহকারী ২ জন, উচ্চমান সহকারী ১ জন, গাড়ি চালক ১ জন ও ক্লিনার ১ জন শূন্য রয়েছে।
মোয়াজ্জেম হোসেন আরও জানান, এসব সংকট আর সীমাবদ্ধতার মাঝেও শতভাগ নিষ্টার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে সংকটগুলো কেটে যাবে।