কুষ্টিয়ার পোড়াদহ রেলওয়ে জংশনের হাসপাতালটি ভেঙে দিয়ে সেখানে নির্মিত হয়েছে একতলা পাকা মার্কেট।
প্রায় দশ বছর ধরে রেলওয়ের হাসপাতালটি ভেঙে সেখানে পাকা মার্কেট নির্মাণ করা হলেও সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিষয়টি তাদের জানা নেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই তৈরি করা হয়েছে এই মার্কেট। নিয়মিত মাসোহারা পাওয়ার কারণে তারা এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন হচ্ছে পোড়াদহ রেলস্টেশন। বৃটিশ শাসনামলে ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর কলকাতা থেকে পোড়াদহ হয়ে কুষ্টিয়ার জাগতি পর্যন্ত প্রথম রেলপথ স্থাপিত হয়। পরে ১৮৭৮ সালের মধ্যে পোড়াদহ থেকে ভেড়ামারা রেলপথ চালু হলে পোড়াদহ রেলওয়ে জংশনে পরিণত হয়। সে সময় সেখানে রেলওয়ে হাসপাতাল, কর্মকর্তা কর্মচারীদের বসবাসের জন্য কোয়ার্টার, ফসল উৎপাদনের মাঠ, ডোবা এমনকি গোরস্থান পর্যন্ত তৈরি করা হয়। এক সময় ১৯৯২ সাল পর্যন্ত রেলওয়ের এই হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পেতো রেলওয়ের স্টাফসহ আশে পাশের মানুষ। হাসপাতালের সঙ্গেই ছিল বিশাল মাঠ। পরবর্তীতে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে হাসপাতালটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
এক পর্যায়ে রেলওয়ের স্থানীয় এক ঠিকাদার টেন্ডারের মাধ্যমে হাসপাতালের পরিত্যক্ত ভবনটি ভেঙে ফেলেন। এর কিছু দিন পর হাসপাতাল ভবনের জায়গায় একতলা বিশিষ্ট ৪৪টি পাকা দোকান নির্মাণ করা হয়। দিন যত গড়িয়েছে মার্কেটে দোকানের সংখ্যাও বেড়েছে। দখল করা হয়েছে হাসপাতালের বিশাল মাঠটিও। হাসপাতাল ভবন এবং মাঠের জায়গা সব মিলিয়ে বর্তমানে দোকানের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৪টি।
এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে অফিসের বিভাগীয় প্রকৌশলী বীরবল মন্ডল এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, বিষয়টি তার এখতিয়ারে নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।
পাকশী রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ এর ফিল্ড কানুনগো রাজিবুজ্জামান বলেন, এগুলো দেখাশোনার দায়িত্ব রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের। আর তাছাড়া আমি অল্প কিছুদিন হলো এখানে যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমাদের যথেষ্ট লোকবল সংকট রয়েছে। যে কারণে চাইলেই আমরা সব সময় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারিনা। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।
পাকশী রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. নূরুজ্জামানও এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
বাংলাদেশ রেলওয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা (পশ্চিম) ডা. সুজিত কুমার রায় জানান, ১৯৯২-৯৩ সালের দিকে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলাদেশ রেলওয়ের ৬৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে ছাটাই করে ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রাখেন। সেই সময় পোড়াদহ রেলওয়ে হাসপাতালের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একযোগে ক্লোজ করে নেওয়া হয়।