বিনোদন

সিনেমা মুক্তির আগেই ‘ছিঃনেমা’

একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের শুরু থেকে মুক্তি পর্যন্ত বহুবিধ ঘটনার মধ্য দিয়ে পরিচালককে যেতে হয়। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে বিচিত্র পরিকল্পনা, কঠোর পরিশ্রম এবং অবশ্যই স্বপ্ন। সেই স্বপ্নপূরণ কতটা হলো এর অনেকটাই নির্ভর করে চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর দর্শকের ভালোলাগার ওপর। ব্যর্থ হলে তখন এটি পরিচিত হয় ‘ছিঃনেমা’ হিসেবে।

কিন্তু সিনেমা মুক্তির আগেই এমন ঘটনা বিরল। অথচ তেমনটাই ঘটেছে ‘তুমি আছো তুমি নেই’ সিনেমার ক্ষেত্রে। গুণী নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত এই সিনেমাটি মুক্তির আগেই নেতিবাচক মন্তব্যে ভেসে যাচ্ছে। এর বিপক্ষে সরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। বলা যায় সিনেমাপ্রেমীদের তোপের মুখে পড়েছেন এর নির্মাতা এবং নায়িকা।

শিশুশিল্পী দীঘিকে নিয়ে ‘তুমি আছো তুমি নেই’ সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রবীণ নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। গত ১৭ অক্টোবর এ সিনেমায় চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরী চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু দু’দিন না পেরুতেই বাপ্পির পরিবর্তে নায়ক সাইমন সাদিককে নেওয়া হয়। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো সরগরম হয়ে ওঠে। এর এক সপ্তাহ পর শোনা যায়, আবারো দীঘির নায়ক বদলে গেছে! এবার সাইমনের পরিবর্তে নেওয়া হয় আসিফ ইমরোজকে। এই নায়ক বদলের খেলায় বাকযুদ্ধও কম হয়নি। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু এ প্রসঙ্গ টেনে প্রথমে বাপ্পিকে, পরে সাইমনকে নিয়ে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। 

সবকিছু পাশ কাটিয়ে দীঘি-আসিফ ইমরোজকে নিয়ে সিনেমাটির শুটিং শুরু করেন নির্মাতা। বেশ ভালোই চলছিল। শুটিং, ডাবিং এবং সম্পাদনার সময় কোনো আলোচনা বা সমালোচনা ছিল না। সিনেমাটি মুক্তির ঠিক কয়েকদিন আগে এর পোস্টার ও ট্রেলার প্রকাশিত হয়। এরপরই শুরু হয় সমালোচনা। প্রথমে পোস্টার দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হতাশা ব্যক্ত করেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে অন্তর্জালে। এরপরেই মুক্তি পায়  সিনেমাটির ট্রেলার। প্রকাশিত ট্রেলারে পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও ত্রিভুজ প্রেমের গল্প উঠে এসেছে। তবে সেখানে নতুনত্বের কোনো ছোঁয়া নেই। গৎবাঁধা নির্মাণ বলে মনে করছেন নেটিজেনরা। ইউটিউবে ট্রেলারটি প্রকাশের পর হতাশা ব্যক্ত করে নেটিজেনদের বড় একটি অংশ।

নেটিজেনদের এই সমালোচনার সঙ্গে সুর মেলান নায়িকা দীঘি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সিনেমাটিতে কাজ করে ভুল করেছি। কাজটি ভালো হয়নি।’ এসব মন্তব্যে চটে যান দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। মূল ঘটনার সূত্রপাত এখান থেকেই। এরপর দীঘির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়েরের হুমকি দেন ঝন্টু। এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। বুধবার (১০ মার্চ) তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, দীঘিসহ তার বাবা ও মামার বিরুদ্ধে কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন। এদিকে ঝন্টুর আইনজীবী বলছেন, ‘মামলা হয়নি।’ বিপরীতমুখী এমন বক্তব্যের কারণে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকেই বিষয়টিকে ‘ঝন্টুর স্টান্টবাজি’ বলে মনে করছেন। 

এদিকে দীঘিকে নিয়ে মন্তব্য করে এই চলমান ঘটনার আগুনে ঘি ঢালেন হিরো আলম। দীঘিকে এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয় তার অপছন্দের অভিনেতা কে? উত্তরে হিরো আলমের নাম বলেন তিনি। এ ঘটনায় পাল্টা জবাব দেন হিরো আলম। তৈরি হয় নতুন জটিলতা। সব দেখেশুনে নেটিজেনরা সিনেমাটিকে ‘ছিঃনেমা’ বলে ব্যঙ্গ করছেন।

এসব ঘটনা কীভাবে দেখছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের নির্মাতারা? ‘মাস্টার মেকার’খ্যাত নির্মাতা মালেক আফসারি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি যদি কোনো সিনেমায় পিওনের চরিত্রেও অভিনয় করি, তা হলেও সিনেমাটি নিয়ে শুভ কামনা জানানো উচিত। সুতরাং দীঘি সিনেমাটি নিয়ে যে মন্তব্য করেছে, তা ঠিক করেনি। ও যখন দেখেছে সিনেমাটির ট্রেলারে ডিজ লাইক বেশি, তখন নেগেটিভ মন্তব্য করে সে ভক্তদের কাছে যেতে চেয়েছে। কিন্তু দীঘি এটি ভুল করেছে। দীঘি ছোট মানুষ। হয়তো কাজটি না-বুঝে করেছে। এখন দীঘির ক্ষমা চাওয়া উচিত। ঝন্টু ভাইয়েরও উচিত তাকে ক্ষমা করে দেওয়া।’

অনেকে বলছেন সিনেমার প্রচারের জন্য এমন করা হচ্ছে। বিষয়গুলো পূর্ব পরিকল্পিত। এ প্রসঙ্গে মালেক আফসারি বলেন, ‘এটা মাস্টার প্ল্যান করে করা নয়। এটা এখন শাপে বর হয়েছে।’ 

এ সময়ের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা বুলবুল বিশ্বাস মালেক আফসারির সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি। এই নির্মাতা বলেন, ‘সিনেমা মুক্তির আগে এমন ঘটনা কখনই শোভন হতে পারে না। সিনেমা মুক্তির আগে প্রচার প্রয়োজন, তবে তা নেতিবাচক হতে হবে তা নয়। ইতিবাচক উপায়েও প্রচার করা যায়!’

তবে সিনেমা মুক্তির আগেই দীঘির নেতিবাচক মন্তব্য করা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন ‘রাজনীতি’খ্যাত এই নির্মাতা। তিনি আরো বলেন, ‘দীঘি জেনেশুনে এবং বুঝে এই সিনেমায় কাজ করেছে। সিনেমায় তার অভিনয় খারাপ হলে সে দায় তাকেই নিতে হবে। বুঝতে হবে তার প্রস্তুতি ভালো ছিল না।’