অর্থনীতি

রমজানে নিত‌্যপণ‌্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে উদ‌্যোগী সরকার, সংশয়ে ব‌্যবসায়ীরা

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ এপ্রিল শুরু হবে রমজান। এ মাসকে সামনে রেখে প্রতিবছরই বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এ বছর নিত‌্যপণ‌্যের সংকট হবে না। তবে এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু রমজান মাসে নয়, সারা বছর ভোগ্যপণ্যের বাজার জিম্মি করে রাখে শক্ত সিন্ডিকেট। তাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে দ্রব্যমূল্য।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ৫ থেকে ১০টি কোম্পানি নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের ইচ্ছায় বাজারদর ওঠানামা করে। এসব কোম্পানির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে সারা দেশের মানুষ।

তবে এ বছর রমজান উপলক্ষে সরকারকে বেশ উদ্যোগী দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবিকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।

সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার রমজান উপলক্ষে টিসিবির কাছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ মজুদ আছে। ২৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি, ৮ হাজার হাজার মেট্রিক টন ছোলা, ১০ হাজার হাজার মেট্রিক টন মশুর ডাল এবং ৫০০ মেট্রিক টন খেজুর কেনার পরিকল্পনা আছে টিসিবির।

সংস্থাটি জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভ্রাম্যমাণ ট্রাক ও ডিলারের মাধ্যমে রমজানের আগে পণ্য বিক্রির বিশেষ কার্যক্রম শুরু করেছে। সারা দেশে ৪০০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ‌্যমে এ কার্যক্রম ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে।

গত মাসে (ফেব্রুয়ারি) অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশকবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভা হয়েছে। সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘রমজান মাসকে সামনে রেখে পর্যাপ্ত মজুদ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে কোনো অবস্থাতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট না হয়। এজন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিয়মিতভাবে সভা করে ভোজ্যতেলের মূল্য পুনঃনির্ধারণ করা হবে।’

এদিকে, রমজানে পণ্যের দাম সহনীয় রাখার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। বৈঠকে উৎপাদক, আমদানিকারক, পরিশোধক এবং পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন। বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, ‘সবার সহযোগিতায় চিনি, সয়াবিন তেল, মশুর ডাল, পেঁয়াজ, খেজুর ইত্যাদির বাজার স্বাভাবিক রাখা সম্ভব।’

বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানা গেছে, রমজান মাসে ভোজ্যতেল সরবরাহ সচল রাখার জন্য দেশের শীর্ষ ৫টি আমদানিকারক গ্রুপকে অনুমোদন দেওয়া হবে। টিসিবির লক্ষ‌্যমাত্রা অনুযায়ী পণ্যের মজুদ বৃদ্ধি করা হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, বিপণন এবং মূল্য নিয়ে কোনো মহল যাতে কারসাজি করতে না পারে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং মনিটরিং করবে।’

সূত্র জানিয়েছে, চাহিদার ভিত্তিতে এ বছর ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টনর পেঁয়াজ কেনার অনুমোদন আছে টিসিবির। এরইমধ্যে ৮০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। আমদানি করা এবং মুড়িকাটা পেঁয়াজ দিয়ে মার্চ পর্যন্ত বাজার চলবে। আগামী এপ্রিল-জুন মাসে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তাছাড়া, অগ্রিম মজুদ হিসেবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিসিবির হাতে আছে।

গত রমজানে দেশে ২৭ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন তেল টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। এবছর সংস্থাটির মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন তেল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৩ হাজার মেট্রিক টন তেল কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

টিসিবি ২৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চিনি শিল্প করপোরেশনের কাছে ৩৮ হাজার হাজার মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত আছে।

রমজান উপলক্ষে ৮ হাজার হাজার মেট্রিক টন ছোলা, ১০ হাজার হাজার মেট্রিক টন মশুর ডাল, ৫০০ মেট্রিক টন খেজুর কেনার পরিকল্পনা আছে টিসিবির।

আসন্ন রমজান মাসে বাজার পরিস্থিতি কেমন থাকবে? এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মাওলা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বাজার কেমন থাকবে তা আমরা (পাইকারি ব্যবসায়ী) বলতে পারব না। আমাদের কাজ হচ্ছে, আমদানিকারকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে তা বাজারে ছাড়া। দাম নির্ধারণ করে থাকে আমদানিকারকরা। ৫ থেকে ১০টি কোম্পনি নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘রমজান আসলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। এজন্য ব্যবসায়ীদের দায়ী করা হয়। পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন ও প্রশাসনকে মাঠে নামিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি আমাদের (ব্যবসায়ীদের) কোনো পণ্য সরবরাহ করে থাকে? উত্তর, না। ব্যবসায়ীরা আমদানিকারকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে ব্যবসা করে। সরকার যদি ব্যবসায়ীদের পণ্য সরবরাহ করে দাম ঠিক করে দিতে পারত, তাহলে এমন কড়াকড়ি ঠিক ছিল। নির্ধারিত দামের বেশি বিক্রি করলেই শাস্তি দেওয়া যেত। এখন আমদানিকারকদের পর্যবেক্ষণ না করে খুচরা বাজার পর্যবেক্ষণ করলে হবে না। মূল বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বাড়া স্বাভাবিক।’