ছোটকাগজ সম্পাদকদের প্রতিবাদের মুখে লিটলম্যাগ চত্বর স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের পর ৩ দিন পার হয়ে গেছে। তবু ছোটকাগজ সম্পাদকদের পছন্দের জায়গায় লিটলম্যাগ চত্বর তৈরি করতে পারেনি মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। বিষয়টি নিয়ে ছোটকাগজ সম্পাদকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলছেন, গত বছরের নির্ধারিত এলাকায় লিটলম্যাগ চত্বর করে না দিলে তারা স্টল খুলবেন না।
প্রতিবাদকারীরা বলছেন, বাংলা একাডেমি কারও সঙ্গে আলোচনা না করে এবার স্থান পরিবর্তন করেছে। এরপর সম্পাদকদের দাবির মুখে লিটলম্যাগ চত্বর আগের জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার কথা দেয়। কিন্তু এখনো স্থানান্তর হয়নি।
জানতে চাইলে ‘লোক’ সম্পাদক, কবি অনিকেত শামীম বলেন, ‘এবার যে ডিজাইন করা হয়েছে, সেটা লিটলম্যাগ চত্বর হয়নি। সারিবদ্ধ দোকান হয়েছে। অথচ মেলার ডিজাইন করেছেন প্রখ্যাত স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর। বাংলা একাডেমি ২১ মার্চ আমাদের বলেছে, ২/১ দিনের মধ্যে লিটলম্যাগ চত্বরকে সরিয়ে গত মেলার জায়গায় করে দেবে। ৩ দিন হয়ে গেলেও দৃশ্যত কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।’
লিটনম্যাগ চত্বর বর্তমান জায়গা থেকে সরিয়ে গত বছরের জায়গায় নেওয়াসহ উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘দ্রষ্টব্য’ সম্পাদক কামরুল হুদা পথিক বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, লিটলম্যাগ চত্বর গত বছরের স্থানে অর্থাৎ মুক্তমঞ্চের পাশে নিতে হবে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ আমাদের কথাও দিয়েছে। কিন্তু কাজের যে গতি, তাতে কবে নাগাদ সেখানে যেতে পারবো, বুঝতে পারছি না।’
‘করাতকল’-এর নির্বাহী সম্পাদক সাফি সমুদ্র বলেন, ‘মেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পাদকদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর তিন দিন পেরিয়ে গেছে। গতবারের জায়গায় লিটলম্যাগ চত্বর সরিয়ে নেওয়ার কাজ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে গেছে। তবে লিটলম্যাগ চত্বর সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ স্টল খুলবো না। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।’
ছোট কাগজ `ল্যাম্পপোস্ট`-এর সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ফারহানা হক শামা বলেন, ‘লিটলম্যাগ চত্বর করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা আমাদের সঙ্গে বিমাতাসূলভ আচরণ করছেন। যত দ্রুত সম্ভব, নির্ধারিত এলাকায় লিটলম্যাগ চত্বর করতে হবে।’
দৃষ্টি সম্পাদক, কবি বীরেন মুখার্জী বলেন, ‘আমাদের দাবি মেনে নিয়ে মুক্তমঞ্চের পাশে নতুনভাবে স্টল বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা একাডেমি। কিন্তু ৩ দিন পরও স্টল তৈরি হয়নি। কাজের যে অগ্রগতি, তাতে আরও ২ দিনেও স্টল তৈরি হবে কি না, সন্দেহ আছে।’
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে বইমেলার ডিজাইনার, স্থপতি ও শিল্পী এনামুল করিম নির্ঝর বলেন, ‘বইমেলার ডিজাইন আমার টিম বিনা পারিশ্রমিকে, ভালোবেসে করে দিয়েছে। তার প্রতিদান যেভাবে পাচ্ছি, ভবিষ্যতে এই কাজের সঙ্গে থাকবো কি না, জানি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘‘লিটলম্যাগ চত্বরকে এবার ‘লেখক বলছি’ প্যাভিলিয়নের পাশে করেছি। যেন বৃষ্টি হলে বই নিয়ে তারা প্যাভিলিয়নে আশ্রয় নিতে পারেন। আসলে এমন একটা বিশাল কর্মযজ্ঞে সবাইকে সন্তুষ্ট রাখা যায় না।’
নির্ঝর বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, করোনাসহ অনেক কিছু মাথায় রেখে এবারের ডিজাইন করতে হয়েছে। রা আপত্তির কথা জানাতে পারতেন। বসে সমাধান করা যেতো। তা না করে ছোটকাগজ সম্পাদকরা যে ভূমিকা নিয়েছেন, সেটা সত্যি দুঃখজনক।’
লিটলম্যাগ চত্বরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক কবি আমিনুর রহমান সুলতানের বলেন, ‘সম্পাদকদের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, সেই অনুযায়ী কাজ চলছে। দ্রুত খাবারের দোকানের পাশে লিটলম্যাগ চত্বরকে স্থানান্তর করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের নির্ধারিত স্থান মুক্তমঞ্চে লিটলম্যাগ চত্বর করার দাবিতে রোববার (২১ মার্চ) থেকে স্টল বন্ধ রেখেছেন ছোটকাগজ সম্পাদকরা। তারা জানিয়েছিলেন, মুক্তমঞ্চের পাশে বসানো খাবার দোকান সরিয়ে সেখানে লিটলম্যাগ চত্বর করতে হবে। তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বাংলা একাডেমি ওইদিন বিকালেই লিটলম্যাগ চত্বর স্থানান্তরের কথা জানায়। কিন্তু ৩ দিন পরও কাজের অগ্রগতি না দেখায় ছোটকাগজ সম্পাদকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।