খেলাধুলা

ভালো ক্রিকেটার হতে হলে...

সব বয়সের শিশুদেরই বিভিন্ন খেলায় মেতে উঠতে দেখা যায়। তবে বর্তমানে তারা সবচেয়ে বেশি মাতোয়ারা ক্রিকেট নিয়ে। এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। সবচেয়ে বড় কারণ হলো, এই খেলায় তারা মজা পায়। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঊর্ধ্বমুখী জনপ্রিয়তা। তবে আমার মতে, খেলার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মজা পাওয়া জন্যই।

একজন ক্রীড়াবিদকে খেলায় অংশ নেওয়ার মজা দিতে পারলে এবং উৎসাহ যোগাতে পারলে তা খুব ভালো ফল নিয়ে আসতে পারে। ক্রিকেটের কথাই বলা যাক। ক্রিকেট খেলতে গিয়ে তারা যে পুরস্কার পায়, আনন্দ পায় তা থেকে তাদের খেলাটার প্রতি আগ্রহ আর ভালোবাসা জন্মায়। মনের মধ্যে খেলাটার প্রতি আকর্ষণ জন্মায়। এর জন্য মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন ও শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা দরকার। শিশুদের শুধু তাদের বাবা-মা, ভাই-বোনই নয়, তার বন্ধুদেরকেও উৎসাহ দিলে এতে দুই পক্ষই উপকৃত হওয়ার সুযোগ থাকে।

বাবা-মা হয়তো গাড়ি চালিয়ে বা অন্য কোনও মাধ্যমে মাঠে অনুশীলনে নিয়ে যায়। কিন্তু এখানেই ভূমিকা শেষ নয়। অনুশীলন শেষে সময় নষ্ট না করে আবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তার খাবার, পড়াশোনা এসব দিকে খেয়াল রাখা কর্তব্য। ক্রিকেট সম্পের্কে জ্ঞান থাকলে ভালো, না থাকলেও যেন উৎসাহ দেন।

ক্রিকেট শিশু বা খেলোয়াড়দের জীবনে উত্তেজনা নিয়ে আসে, তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতা গড়ে তোলে। যখন ক্রিকেট খেলে তখন তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আত্মসচেতনতা গড়ে উঠে। ওরা একটা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ পায়, যেখানে আবেগ প্রকাশ ও শক্তি গ্রহণ করার সুযোগ পায়। এছাড়া খেলাটার মাধ্যমে একে অপরকে সহযোগিতা করার মনোভাব ও সুস্থ প্রতিযোগিতা সম্পর্কে ধারণা গড়ে ওঠে।

ক্রিকেট শিশু বা খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখে এবং তাদেরকে সমাজে বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা যোগায়। তবে নেতিবাচক দিকও আছে। সেটা হলো, শিশু বা খেলোয়াড়কে তার সামর্থ্য ও আগ্রহ বিবেচনা না করে জোর করে চাপিয়ে কিংবা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা হয় যেখানে শিশু বা খেলোয়াড় ভাবতে শেখে জয় ছাড়া কিছু কাম্য নয়। তাহলে তা ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি করে। ফলে জোরপূর্বক নয়, বরং খেলাটার পদ্ধতি এবং আনন্দ দিয়ে খেলাধুলা অনুশীলন করালে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স যেমন বৃদ্ধি পাবে, তাদের মানসিক বিকাশও ঘটবে। একজন খেলোয়াড় চায় সম্মান এবং উৎসাহ, বিশেষ করে শিক্ষক এবং পিতামাতার কাছ থেকে।

ক্রিকেট এমন একটা খেলা যেখানে দুটি বিষয়ে সজাগ থাকতে হয়। এক হলো প্রতিপক্ষ আর দুই নম্বরটি- নিজেই নিজের প্রতিপক্ষ। এর মধ্যে প্রতিপক্ষকে সামলাতে হলে নিজের টেকনিক, কৌশলের দিকে যেমন মন দেওয়া লাগে; একইভাবে প্রতিপক্ষের এসব বিষয় জানতে হয়। আর নিজের প্রতিপক্ষ বলতে নিজের মনোযোগ, আত্মবিশ্বাস এসব গড়ে তোলার কাজ করতে হয়।

নিজের মনোযোগ ধরে রাখার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্রিকেট অনুশীলন করে খেলোয়াড়রা। একইসঙ্গে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্যও অনুশীলন চাই। ক্রিকেটে ৯৯ শতাংশ হলো মনের খেলা এবং ১ শতাংশ শারীরিক। মানসিক শক্তি বা মনে আনন্দ পাওয়ার জন্য অন্য খেলাও খেলা উচিত। যেমন ফুটবল, ভলিবল, টেবিল টেনিস, লন টেনিস, গলফ ইত্যাদি।

খেয়াল রাখতে হবে কী কাজটা করা হচ্ছে এবং কোন বিষয়ে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ আছে বা করা সম্ভব। যেসব খেলোয়াড় জীবনে সাফল্য পেয়েছেন তাদের মনোসংযোগ এবং মানসিকতা অনেক দৃঢ় ছিল, মনোভাব ছিল ইতিবাচক। শচীন টেন্ডুলকারের কথাই বলা যায়। তিনি একটি শট দশ হাজার বার প্র্যাকটিস করতেন। এতে তার মনসংযোগ এবং নিয়ন্ত্রণ থাকতো শটটির উপর। তিনি ক্রিকেট নিয়ে ধ্যানের পর্যায়ে চলে যেতেন। হৃদয়ের পবিত্রতা নিয়ে কাজ করতেন। নিজের প্রতিদিনের অনুশীলন বা খেলা নিয়ে গবেষণা করতেন।

অনুলিখন: ইয়াসিন হাসান