চলমান একসপ্তাহের লকডাউনের মেয়াদ শেষ নাহতেই নতুন করে আরও সাত দিনের লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনে যাবে সারাদেশ। এই সময়ের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অফিস থেকে শুরু করে কলকারখানাও বন্ধ থাকবে। চলবে না কোনো যানবাহন। কেবল জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবা চালু থাকবে। সরকারের এই ঘোষণায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
অবশ্যই, এর আগে, সরকারের গত ৪ এপ্রিলের ঘোষণা অনুযায়ী ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আগামী ১১ এপ্রিল রাত বারোটা পর্যন্ত এক সপ্তাহের লকডাউন চলছে। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বুধবার নতুন ঘোষণা দেয় সরকার। এই ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার থেকে সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন সেবা চালু রাখার কথা বলা হয়।
সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, সামনে রমজান ও ঈদ। ঈদের সময়টাতেই ব্যবসায়ীরা সারা বছরের ব্যবসা করে থাকেন। গত বছর করোনার কারণে দোকানপাট খুলতে পারেননি তারা। এরমধ্যে মৌসুমের প্রথমে এসে লকডাউনের বিশাল ধাক্কার মধ্যে পড়েছেন তারা। ১৪ এপ্রিল থেকে একসপ্তাহের লকডাইন এখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে।
গাউছিয়া দোকান মালিক সমিতির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল হান্নান প্রধান বলেন, ‘গতবছর করোনার কারণে মার্কেট খুলতে পারিনি। এবছর আশা করেছিলাম, কিছুটা কাভার করবো। এবার ঋণ নিয়ে কিছু মালামাল আমদানি করেছি। এবারের লকডাউনে একদম শেষ হয়ে গেলাম।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান বাবু বলেন, ‘আজ ৪দিন পর মার্কেট খুলে দেওয়ার পর একটু আশাবাদী হয়েছিলাম। এখন আবার জানলাম, ১৪ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত ফুল লকডাউন। আমরা পাইকাররা যে লোন করে কোটি টাকার জামা-কাপড় বানিয়ে রেখেছি, সারাদেশের ব্যবসায়ীরা সেসব না নিলে এই কাপড় দিয়ে আমরা কী করবো? গত বছরও বিরাট অঙ্কের টাকা লোকসান দিয়েছি। এবার লোকসান দিলে একবারে মারা পড়বো।’
ইস্টার্ন মল্লিকা দোকান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সরওয়ার উদ্দিন খান বলেন, ‘গত বছরের লোকসানই সামলে উঠতে পারিনি। এবারের বেচাকিনি না করতে পারলে ব্যবসা ছেড়ে রাস্তায় নামা ছাড়া উপায় থাকবে না।’
গাউছিয়া, চিশতিয়া, চাঁদনীচক, নূর ম্যানসনসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কারখানায় কাজ করেন কয়েক হাজার কর্মচারী। এসব কর্মচারীর মধ্যে মাইনুদ্দিন, রিয়াজ, আলতাফ, আলামিন জানান, ‘ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরের আমাদের হিসাব করেন রোজার মাসে। গতবছর বন্ধের কারণে কোনো হিসাব করতে পারেননি। আমরা কোনো টাকা-পয়সা পাইনি। খেয়ে, না খেয়ে কোনোভাবে বেঁচে আছি। এখন আবার লকডাউন হলে, মালিকরা এই অজুহাতে কোনো টাকা দেবেন না। পরিবার নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে আমাদের। করোনা মারতে হবে না, না খেয়েই আমরা মারা যাবো।’