অর্থনীতি

বেড়েছে রাজস্ব আদায়, বছর শেষে গতি আরও বাড়ার প্রত‌্যাশা 

করোনার মধ্যেও  ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের চেয়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায় কিছুটা বেড়েছে। অর্থবছরের শেষভাগে রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়বে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এই আশার কথা জানানো  হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  ২০২০-২০২১ অর্থবছরের মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ১ কোটি টাক। যা জিডিপির ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট আহরিত রাজস্বের পরিমাণ ১ লাখ ৩৩ হাজার ১০৫ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ। বিগত অর্থবছরের একই সময়ের আদায়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।  রাজস্ব আহরণের গতি বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)সহ সংশ্লিষ্টরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণত অর্থবছরের শেষভাগে রাজস্ব আহরণের গতি বাড়ে। তাই অর্থ মন্ত্রণালয় আশা করছে, অর্থবছর শেষে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ কার্যকর হলেও মূলত দুটি কারণে ওই অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর বা মূসক বাবদ রাজস্ব আহরণ আশানুরূপ ছিল না। প্রথমত, নতুন আইনি ব্যবস্থার বাস্তবায়নজনিত অর্থবছরের প্রথমার্ধে সাময়িক হিক্আপ। দ্বিতীয়ত, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক মন্দা ও ব্যবসা-বানিজ্যে স্থবিরতা থাকায় অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণে ধস নামা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূসক আহরণে গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রোনিক ফিসকাল ডিভাইস স্থাপনসহ রাজস্ব প্রশাসনের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে গৃহীত সমন্বিত উদ্যোগ চলমান থাকায় পর্যায়ক্রমে রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে গতিশীলতা আসবে। আশার কথা এই যে, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মূল্য সংযোজন কর আহরণের গতি বেড়েছে।  যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের আদায়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।  

২০২০-২০২১ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত সরকারি ব্যয় পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে মোট ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা  যা জিডিপি’র ১৭.৯১ শতাংশ। এরমধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ) এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যয় ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ)। অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা (বাজেটের ২৪ দশমিক ৯১ শতাংশ)। এরমধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় ১ লাখ ৭ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা (বাজেটের প্রায় ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ)।

অর্থ বিভাগের আইবাসের তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিগত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মোট ব্যয় ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ, পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাবদ ব্যয় ২৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ কমেছে।

প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে ৪৯ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা, বিগত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৫৫ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার মোট বরাদ্দের ২৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

এতে বলা হয়েছে,কোভিড-১৯ পরিস্থিতির প্রকটতা এখনো বিদ্যমান থাকায় বর্তমান অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নে তার প্রভাব পড়েছে। তবে বাস্তবায়নের হার বাড়ানোর লক্ষ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, উন্নয়ন সহযোগী ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় ও বড় প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির নিয়মিত পরিবীক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ক্ষেত্রে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ তুলনামূলক ভাবে বেশি। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এমন ১০টি বড় মন্ত্রণালয়, বিভাগের অনুকূলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৭৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে; অবশিষ্ট অন্যান্য বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এই ১০টি মন্ত্রণালয়, বিভাগের এডিপি ব্যয় হয়েছে ৩৮ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা যা তাদের অনুকূলে দেওয়া বার্ষিক বরাদ্দের ২৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ সময়ে অন্যান্য বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা যা তাদের অনুকূলে দেওয়া বার্ষিক বরাদ্দের ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ।