‘করোনা আমার সংসারটাকে শেষ করে দিলো। ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। পোশাক কারখানায় চাকরি করে সংসার চালাতাম। গতবার একবার চাকরি চলে গেলো। আবার কষ্ট করে একটা চাকরি পেলাম। এবারও এই করোনা আমার সব কেড়ে নিলো।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাজধানীর গাবতলী থেকে কথাগুলো বলছিলেন আমেনা বেগম। তিনি যাবেন বাগেরহাট। তাই গাবতলী বাস টার্মিনাল এসেছেন। আগে থেকেই জানতেন বাস চলছে না। ১৪ তারিখ থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় তিনি বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
আমেনা বেগম বলেন, ‘দেশে কী আইলো আল্লাহই ভালো যানে। গত বছর থেকে এই করোনা করোনা করে জীবনটাই শেষ হইয়া যাচ্ছে। এই মরার ভাইরাস কবে শেষ হইবে কইতে পারেন? এই ভাইরাসের জন্য পুরা সংসারটাই শেষ হইয়া যাচ্ছে। এখন মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার চালাইতে হইবে। তাও পাবো কি না আল্লাহ জানে।’
রোববার (১১ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে গাবতলীতে এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাস চলছে না সেটা জানি কিন্তু বাড়ি যেতেই হবে। তাই অপেক্ষা করছি যদি কোনো ট্রাক বা পিকাপে করে বাড়ি যাওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর থেকে এই করোনার সমস্যা শুরু হয়েছে। আমার ছেলে সামি একটি হোটেলে কাজ করতো। করোনার কারণে হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে। গত বছরও এই সময়ে লকডাউন ছিল। তখনও হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ি চলে যেতে হয়েছিলো। তখন কিছু জমানো টাকা থাকলেও এবার কোনো টাকাই নেই। কীভাবে সংসার চালাবো বুঝতে পারছি না।’
এদিকে, সকাল থেকেই রাজধানীতে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। কঠোর লকডাউনের কারণে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
কথা হয় রাজধানীর চকবাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘১৪ তারিখ থেকে নতুন করে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকবে। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। ঢাকা থেকেতো কিছু করার নেই। এই লকডাউন মনে হচ্ছে ঈদ পর্যন্ত চলবে। আর যদি এর আগে লকডাউন শেষ হয় তাহলে না হয় আবার চলে আসবো।’
গাবতলীর আমিনবাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর সিটি পরিবহনে করে শত শত যাত্রী এসে নামছেন। কেউ কেউ প্রাইভেটকারে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে আরিচা যাচ্ছেন। আবার অনেকেই অপেক্ষা করছেন পিকআপের জন্য। কিছু সময় পর পর এই এলাকা থেকে পণ্যবাহী পিকআপ এসে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন।