ফোক ফ্যান্টাসি আর অ্যাকশন ঘরানার সিনেমার অপ্রতিদ্বন্দ্বী ড্যাশিং হিরো ওয়াসিম। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একচেটিয়া রাজত্ব করেছেন তিনি। ক্যারিয়ারে ১৫০টি সিনেমায় অভিনয় করেন। যার প্রায় সবগুলোই ব্যবসাসফল। স্ত্রী-কন্যার অকাল মৃত্যুর কারণে ২০০৬ সালে অভিনয় থেকে দূরে চলে যান। এরপর খুব একটা এফডিসিতে আসতেন না।এমনকী এফডিসির কোনো অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা যেত না।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর এফডিসিতে গিয়েছিলেন ওয়াসিম। সেদিন আড্ডায় মেতেছিলেন এই বরেণ্য অভিনেতা। তার আড্ডার সঙ্গী হয়েছিলেন নায়ক সোহেল রানা, ফারুক, আলমগীর, জাবেদসহ সোনালি যুগের বেশ কয়েকজন অভিনেতা। রাইজিংবিডিকে এমনটাই জানান শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জায়েদ খান বলেন, ‘ওয়াসিম ভাই এফডিসিতে খুব একটা আসতেন না। তার সঙ্গে মোবাইলে আমার কথা হতো। খোঁজ-খবর নিতাম। শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ওয়াসিম ভাইকে খুব করে ধরলাম-নির্বাচনের দিন আসতে হবে। তিনি আমাদের কথা না রেখে পারেননি। সেদিন এফডিসিতে এসেছিলেন। অনেকক্ষণ ছিলেন। সোনালি যুগের কিংবদন্তিরা একসঙ্গে দীর্ঘ সময় ছিলেন। ওটাই ছিল ওয়াসিম ভাইয়ে এফডিসি থেকে শেষ বিদায়। আর আসা হলো না এফডিসিতে।’
চলচ্চিত্রের গুণীজনদের এফডিসিতে একত্রিত করার পরিকল্পনা করেছিলেন জায়েদ খান। ওয়াসিম আসার জন্য সম্মতি দিয়েছিলেন। তা স্মরণ করে জায়েদ খান বলেন, ‘মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওয়াসিম ভাইকে আমন্ত্রণ করতাম। কিন্তু ভাই আসতেন না। ইচ্ছা ছিল করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সব গুণী শিল্পীদের একসঙ্গে এফডিসিতে নিয়ে আসবো। ওয়াসিম ভাইকে এ কথা বলেও ছিলাম। ভাই রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু আর এফডিসিতে আসা হলো না ওয়াসিম ভাইয়ের।’
ওয়াসিমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে জায়েদ খান বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ওয়াসিম ভাইয়ের খোঁজ নিতে গিয়ে শুনি তিনি অসুস্থ। করোনার কারণে দেখতে যেতে পারিনি। কিন্তু খোঁজ-খবর নিয়েছি। কাল রাত সারে ১২টার দিকে খবর আসে ওয়াসিম ভাই নেই। খবরটা শুনে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
শনিবার (১৭ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় মারা যান ওয়াসিম। করোনা মহামারির কারণে শেষ বিদায় জানাতে এফডিসিতে তার মরদেহ নেওয়া হচ্ছে না। বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এর পর বনানীতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে বলে রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান।
বেশ কিছুদিন ধরে বাসায় শয্যাশয়ী ছিলেন ওয়াসিম। ব্রেন, নার্ভ ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন বরেণ্য এই অভিনেতা।
১৯৭২ সালে ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে ওয়াসিমের অভিষেক হয়। নায়ক হিসেবে তার যাত্রা শুরু মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ সিনেমার মাধ্যমে। দিন যতই যেতে থাকে ওয়াসিমের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়। বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমার অপরিহার্য নায়ক হয়ে ওঠেন তিনি।
ওয়াসিম-অঞ্জনা জুটি বেঁধে ভাই নূরী, প্রেমের সমাধী, ঈমানদার, দিদার, ডাকু ও দরবেশ, জুলুমের বদলা, সংঘাত, যাদুপুরী, নান্টুঘটক, হীরামন, আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ, বিষ কন্যার প্রেম, রাখে আল্লাহ মারে কে, খঞ্জর, নাগমাতাসহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন।