চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের চিত্রনায়ক ওয়াসিম। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। শোক প্রকাশ করেছেন নন্দিত এই অভিনেতার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও ভক্তরা।
নায়ক ওয়াসিম বাস্তবজীবনে ছিলেন স্বাস্থ্য সচেতন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন বলে জানালেন সোনালি যুগের নন্দিত অভিনেত্রী রোজিনা। তারা একসঙ্গে ৭৫টি সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। শুধু রূপালি পর্দায়ই নয়, বাস্তবেও তারা ছিলেন বন্ধুসম।
সদ্য প্রয়াত সুপারস্টার ওয়াসিমকে নিয়ে রোজিনা বলেন, ‘পর্দার সুপারস্টার ওয়াসিম ভাইকে সবাই জানেন। কিন্তু বাস্তব জীবনেও তার ভালো হ্যাবিট ছিল। ওয়াসিম ভাই শুধু মিস্টার ইস্ট পাকিস্তানই ছিলেন না, তিনি খুবই স্বাস্থ্য সচেতন ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। কখনো মদের ধারে কাছেও যাননি। এমনকি প্রকাশ্যে সিগারেটও খেতেন না।’
ওয়াসিমের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের ঘটনা বর্ণনা করে রোজিনা বলেন, ‘ওয়াসিম ভাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল শিল্পী সমিতির নির্বাচনের সময়। আমি বলেছিলাম, তার সঙ্গে আড্ডা দিতে যাবো। সেটা আর হয়নি। কিছুদিন আগে ওয়াসিম ভাইয়ের একটি ছবি আমাকে একজন পাঠিয়েছিল। দেখলাম, শরীরটা ভীষণ খারাপ। মাত্রই আমি গোয়ালন্দ থেকে ফিরলাম। কিন্তু তাকে দেখতে আর যাওয়া হলো না। এমন পরিপাটি, বিনয়ী ও আন্তরিক মানুষের বড় অভাব এখন। তিনি চলে যাওয়াতে সেই হাহাকার আরো বেশি করে তাড়া করছে।’
ফোক ফ্যান্টাসি আর অ্যাকশন ঘরানার সিনেমায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী ড্যাশিং হিরো ওয়াসিম। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ওয়াসিমের ছিল একচেটিয়া রাজত্ব। অভিনয় ক্যারিয়ারে ১৫০টি সিনেমায় অভিনয় করেন। যার প্রায় সবগুলোই ব্যবসাসফল ছিল। কিন্তু স্ত্রী-কন্যার অকাল মৃত্যুর পর ২০০৬ সালে অভিনয় থেকে দূরে সরে যান তিনি।
গত কয়রকদিন ধরে বাসায় শয্যাশয়ী ছিলেন ওয়াসিম। ব্রেন, নার্ভ ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন বরেণ্য এই অভিনেতা। অসুস্থ হওয়ার পর তাকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। গত ১৭ এপ্রিল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় মারা যান তিনি। গতকাল বাদ জোহর বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয় এই অভিনেতাকে।
১৯৭২ সালে ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে ওয়াসিমের অভিষেক হয়। নায়ক হিসেবে তার যাত্রা শুরু মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ সিনেমার মাধ্যমে। দিন যতই যেতে থাকে ওয়াসিমের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়। বাণিজ্যিক সিনেমার অপরিহার্য নায়ক হয়ে ওঠেন তিনি।