জাতীয়

‘পোশাক কারখানার বিষয়ে ক্রেতাদের আত্মবিশ্বাস ফিরেছে’

দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনার দিনটি ছিল ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। সাভারে আট তলা রানা প্লাজা ধসে নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন। পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় আরও হাজারখানেক পোশাক শ্রমিককে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর দেশ-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।

আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে আসে কড়াকড়ি। ওই সময় প্রেসিডেন্ট ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করেন। যা এখনো অব্যহত রয়েছে। তবে দেশে তৈরি পোশাক খাতে অনেক সংস্কার হয়েছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কারখানার বিষয়ে ক্রেতাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। কারখানাগুলোতে এখন কমপ্লায়েন্স বা উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।

দেশি-বিদেশি সংস্থার সব ধরনের শর্ত পূরণ করে দেশের তৈরি পোশাক খাত আবার বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানি কারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

ফারুক হাসান বলেন, ‘রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর আমাদের সচেতনতা আরও বেড়েছে। বড় বিষয় হচ্ছে, কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয় অনেক উন্নত হয়েছে। যা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ বা প্রতিযোগী দেশের তুলনায় অনেক ভালো। ’

তিনি জানান, আগে বিজিএমইএ থেকে যখন সদস্য পদ দেওয়া হতো তখন প্রার্থীর কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা, আর একটি কারখানার দুইটি সিঁড়ি আছে কিনা, জরুরি বহিরগমন ব‌্যবস্থাসহ নানা বিষয় দেখে সদস্য পদ দেওয়া হতো। কিন্তু এখন অনেক গুরুত্ব দিয়ে সবগুলো বিষয় নিশ্চিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। রানা প্লাজার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ভবনটির মালিকানা ছিল অন্য ব্যক্তির। কয়েকটি কারখানা অগ্রিম টাকা দিয়ে ভবন ভাড়া নিয়েছে। তারা কিন্তু টেকনিক‌্যাল বিষয়গুলো এতো গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এখন আগের মতো শুধু কাগজ দিলেই হয় না, আমাদের (বিজিএমইএ) ইঞ্জনিয়াররা সরসরি গিয়ে ড্রয়িং (কারখানার নকশা) পরীক্ষা করেন। রানা প্লাজা আমাদের একটি বিষয় সচেতন করেছে, এখন আমরা সদস্য দেওয়ার বিষয়ে বেশ কঠোর। আর সদস্যরাও কারখানা ভাড়া নেওয়ার সময় ভবনের বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আশা করি, রানা ও তাজরিনের মতো বাংলাদেশে আর কোনো ঘটনা ঘটবে না। এ ধরনের ঘটনা যাতে না হয়, সেজন্য আমরা গত কয়েক বছর থেকে কাজ করেছি, এখনও করে যাচ্ছি।  শ্রমিক নিরাপত্তা, অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে কয়েক বছরে অনেক বড় বিনিয়োগ করা হয়েছে।’

দেশের পোশাক কারখানাগুলোর বিষয়ে ক্রেতাদের মধ্যে এখন আত্মবিশ্বাস এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারাও মনে করে বাংলাদেশ এখন বেস্ট ফ্যাক্টরি রয়েছে। এছাড়া, উন্নয়ন সহযোগী এবং দেশি-বিদেশে শ্রমিক সংস্থা বিশ্বাস করে এখানে পরিস্থিতি অনেক উন্নত হয়েছে।’

উন্নয়ন সহযোগী ও পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নেতিবাচক মন্তব্য এখন ইতিবাচক হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মাধ্যম থেকে আমাদের যেসব শর্ত দিয়েছিল তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছি। দেশে অ‌্যাকর্ড এবং অ‌্যালায়েন্স এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) অন্যান্য সংস্থার বিভিন্ন পরামর্শ পেয়েছি। আমাদের স্বার্থে, শিল্প রক্ষায় তাদের সঙ্গে নিয়ে এক যোগে সমস্যা সমাধানে কাজ করেছি।’

তিনি জানান, বর্তমানে যেসব কারখানায় সমস্যা ছিল, তা ঠিক করা হয়েছে। নতুন কারখানা আরও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজ করছে। ১৪৫টি গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে। আরও অনেকগুলো এই তালিকায় আসার অপেক্ষায় আছে। এমনকি চীনও আমাদের পর্যায়ের কোনো গ্রিন ফ্যাক্টরি নাই। তাদের মাত্র ৫০টি গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে।

শ্রমিকদের কবরে শ্রদ্ধা জানাবে বিজিএমইএ: বিজিএমইএ সভাপতি জানান, রানা প্লাজা দিবস উপলক্ষে শনিবার (২৪ এপ্রিল) নিহত শ্রমিকদের কবর জুরাইনে শ্রদ্ধা জানাবে বিজিএমইএ। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের খোঁজ খবরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বিজিএমইএ যৌথভাবে কাজ করছে। যেসব শ্রমিক আহত রয়েছেন, তাদের সবাই চাকরিতে রয়েছেন।

ফারুক হাসান বলন, ‘ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেই দিকেই আমাদের মূল ফোকাস থাকবে। সেজন্য এখন অনেক উদ্যোগ নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন করছি।’