করোনাভাইরাসের কারণে দেশের পোশাক শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত এবং খাত সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের ঝুঁকি বেড়েছে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।
তারা বলছেন, করোনার সময় ৩৫ শতাংশ শ্রমিকের বেতন কমেছে। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা বিভিন্ন ঝুঁকিতে রয়েছেন। ঝুঁকি হ্রাসের জন্য আইনের সঠিক প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণায়। এতে ক্রেতা, সরবরাহকারী এবং শ্রমিকরা উপকৃত হবেন বলে গবেষকরা মনে করেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) ‘দি উইকেস্ট লিংক ইন গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন: হাউ দি প্যানডেমিক ইজ এফেক্টিং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার’ শীর্ষক গবেষণার আনুষ্ঠানিক (ভার্চুয়াল) উদ্বোধন করেন ইউএনডিপির রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টিভ সুদীপ্ত মুখার্জি। ইউএনডিপি ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির চৌধুরী সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ এবং ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান রাইটস এ- বিজনেস পরিচালিত এক গবেষণায় করোনাকালীন গার্মেন্টস কর্মী বিশেষ করে নারী কর্মীদের বিভিন্ন ঝুঁকির চিত্র উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, ২০২০ সালে করোনার সময় ৩৫ ভাগ কর্মীদের বেতন কমে যায়। বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া, করোনার কারণে বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়া, শিপমন্টে দেরি হওয়া, সময়মতো পণ্যের মূল্য না পাওয়াসহ বিবিধ কারণে গার্মেন্টস খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং গার্মেন্টস কর্মীদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক নারী কর্মীর চাকরি চলে যাওয়ার পাশাপাশি অনেক কর্মীর উপার্জন কমে গেছে। বাধ্য হয়ে কর্মীরা দেনায় জড়িয়ে পড়েছেন বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
সুইডিশ সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এই গবেষণায় পূর্বের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করার আহ্বান জানান গবেষকরা।
গবেষণার অংশ হিসেবে অক্টোবর ২০২০ এবং ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রেতা, বাংলাদেশি সরবরাহকারী, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশের গার্মেন্টস কর্মীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির ফলে গার্মেন্টস কর্মীদের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণায়। এতে আন্তর্জাতিক ক্রেতা, বাংলাদেশি সরবরাহকারীর পাশাপাশি বাংলাদেশের গার্মেন্টস কর্মীরাও উপকৃত হবেন বলে গবেষকদের অভিমত।
এ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম করোনাকালীন বিধি-নিষেধের মধ্যে সরকার কর্তৃক গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য নেওয়া গৃহীত উদ্যোগের বিবরণ দেওয়ার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ব্র্যান্ডের ইমেজ রক্ষায় গার্মেন্টস কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা তথা অকুপেশনাল হেলথ অ্যাড সেফটির বিশেষ গুরূত্বারোপ করেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য ডক্টর কামাল উদ্দিন আহমদ ও বিজেএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।
বিজেএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় গার্মেন্টস কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন আইসোলেশন সেন্টার, পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে করোনা পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালুর বিভিন্ন দিক আলোচনা করেন। তিনি আরএমজি সাস্টইেনবিলিটি সেন্টার (আরএসসি) প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলায় গার্মেন্টস কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
ভার্চুয়াল আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন ইউএনডিপির রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টিভ সুদীপ্ত মুখার্জি। তিনি স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন নিশ্চিতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়সহ সবাইকে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।