সাতসতেরো

আজ থেকে ইতিকাফে বসবেন রোজাদাররা 

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল রহমত ও মাগফিরাতের দশক। আগামীকাল থেকে নাজাতের দশক শুরু। ভালো সময়গুলো দ্রুত ফুরিয়ে যায়। আজ ২০ রমজান। সন্ধ্যায় ইতিকাফে বসবেন রোজাদাররা।

‘ইতিকাফ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ অবস্থান করা। শরিয়তের পরিভাষায়, যে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতসহ নিয়মিত আদায় করা হয়, এমন মসজিদে আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিয়তসহ অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া। যা মহল্লার কয়েকজন আদায় করলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু কেউ না বসলে সবাই গুনাহগার হবে।

হযরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের প্রথম দশকে ইতিকাফ করলেন, দ্বিতীয় দশকেও করলেন। এরপর তিনি যে তুর্কি তাঁবুর ভেতরে অবস্থান করছিলেন তা থেকে মাথা বের করে বললেন, আমি এ রাত অর্থাৎ শবে কদরের সন্ধানে প্রথম দশক ইতিকাফ করলাম, মধ্যম দশকেও করলাম। এরপর জনৈক আগন্তুকের (ফেরেশতার) মাধ্যমে আমাকে বলা হলো, রাতটি শেষ দশকে নিহিত রয়েছে। সুতরাং আমার সঙ্গে যারা ইতিকাফ করেছে, তাদের শেষ দশকে ইতিকাফ করা উচিত। (মিশকাত) 

এ হাদিস থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, কদরের রাতটি পাওয়াই ইতিকাফের উদ্দেশ্য। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম।

ইতিকাফ শুদ্ধ হওয়ার জন্য চারটি শর্ত রয়েছে, ১. মসজিদে অবস্থান করা। তবে মহিলারা নিজ নিজ বাড়িতে ইতিকাফ করবেন। ২. বড় নাপাকি থেকে পবিত্র হওয়া। অর্থাৎ নারী-পুরুষের গোসল ফরজ হলে শরীর পবিত্র করে নেবে এবং নারী হায়েজ নেফাস থেকে পবিত্র হবে। ৩. রোজা রাখা। 

ইতিকাফের জন্য রোজাও শর্ত। অবশ্য তা শুধু ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য। মুস্তাহাব ও সুন্নাত ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত নয়। ইতিকাফে করণীয় হলো, কল্যাণকর কথা ছাড়া বাজে কথা না বলা। তবে নীরবে সময় কাটানো মাকরুহ। ইতিকাফের জন্য সর্বোত্তম মসজিদ গ্রহণ করা। কোরআন তেলাওয়াত করা, জিকির-আজকার করা, দরুদ পড়া, দীনি আলোচনা করা, ধর্মীয় বই-পুস্তক অধ্যয়ন ও রচনায় লিপ্ত থাকা ইত্যাদি। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার মতো মানবিক প্রয়োজন তথা প্রস্রাব-পায়খানা অথবা জুমার জামাতে শরীক হওয়া ছাড়া ইতিকাফরত ব্যক্তি মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ ভেঙে যায়।

ইতিকাফের অনেক ফজিলত ও গুরুত্ব রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতিকাফ করে, আল্লাহ তার এবং জাহান্নামের মধ্যে তিনটি গহ্বর সৃষ্টি করবেন, যার দূরত্ব আসমান-জমিনের দূরত্বের চেয়ে অধিক। (তিবরানি)

ইতিকাফ জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি একদিনও ইতিকাফে বসবে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তার এবং জাহান্নামের মধ্যে তিন খন্দকের ব্যবধান করবেন। এক খন্দক পাঁচশ বছরের পথ। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগির কাজে এত কষ্ট স্বীকার করতেন যা অন্য সময় করতেন না। (তিরমিজি)

তিনি আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি খালেস নিয়তে এবং খাঁটি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশে ইতিকাফ করবে, তার পূর্ববর্তী সব সগিরা গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। তাই যাদের সুযোগ আছে রমজানের এই শেষ দশদিন ইতিকাফ করে অজস্র সওয়াবের অংশীদার হতে পারেন।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম