মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ফিরছিলেন জিম থেকে। সঙ্গে ব্যাটিং পরামর্শক জন লুইস। একডেমি ভবনের সামনে সাংবাদিকদের বিশাল বহর। সেখানে চলছিল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজের স্পন্সরের নাম ঘোষণা অনুষ্ঠান।
বায়ো-বাবলে থাকা মাহমুদউল্লাহর সেখানে যাওয়া মানা। তাকে সেখানে দেখে একজন মনেও করিয়ে দিলেন, ‘বায়ো-বাবল ভঙ্গ’। মাহমুদউল্লাহ হেসে উড়িয়ে দিলেন। লুইসের বাংলা বোঝার কথা না। কিন্তু ওই মুহূর্তে গলায় ঝুলিয়ে রাখা মাস্ক কী মনে করে নাকে তুললেন তা একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন।
বিসিবির ঢিলেঢালা বায়ো-বাবলের আরও অনেক চিত্রের এটি একটি। এরকম আরও আছে। বিসিবির আইরন গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতে প্রয়োজন হয় বিশেষ অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড। নিরাপত্তা কর্মীকে সাফ নির্দেশনা দেওয়া আছে, ওই গেটে ক্রিকেটার, অফিসিয়াল বাদে বাকি সবার অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড লাগবে। অথচ দেখা গেল অনেকেই কোন ধরনের অ্যাক্রিডিটেশন ছাড়াই মাঠে ঢুকেন। মাঠের সবুজ গালিচায় পা মাড়াচ্ছেন।
বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের সামনে সেলফি তোলার হিড়িকের দেখাও মিলল ম্যাচের আগের দিন। তাহলে কোথায় রইল বিসিবির বহুল আলোচিত এবং ব্যয়বহুল বায়ো-বাবল? সব তো তছনছ!
ওই অনুষ্ঠানে যিনি উপস্থাপিকার দায়িত্বে ছিলেন তিনি তো আরও এক ধাপ এগিয়ে। ড্রেসিংরুমের সামনে নিজের ফেসবুকের জন্য ভিডিও করলেন, ছবি তুললেন ডাগআউটের ছাউনিতে বসে! অথচ সেসব জায়গা বায়ো-বাবলের অন্তর্ভুক্ত। কোনো ভাবেই ওখানে সিরিজের ক্রিকেটার এবং টিম সদস্য ছাড়া আর কারো বসারই কথা না। সেই নির্দেশাবলী আছে ঠিকই কিন্তু তা পালন যে হচ্ছে না সেটা দেখারই যেন কেউ নেই!
এছাড়া মাঠ সাজানোর দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা দুপুরের পর থেকে মাঠে অবাধে প্রবেশ করেছেন। এদের কারো মুখে মাস্ক ছিল, কারো ছিল না। কাজের কারণে দল বেঁধে চলাফেরাও করেছেন। ব্রডকাস্টের যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা বায়ো-বাবলে থাকলেও তাদের চলাফেরার পথও ছিল অরক্ষিত।
বায়ো-বাবল নিয়ে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিলেও ম্যাচের আগের দিন ছিল নামকাওয়াস্তে। একের পর এক ভুলের খেসারতও দিতে হয়েছে।
অতিথি শ্রীলঙ্কা দলের ম্যাচের আগের দিনের কোভিড টেস্টে তিনজন পজিটিভ আসে। শেষমেশ দ্বিতীয় পরীক্ষায় শ্রীলঙ্কার শিরান ফার্নান্দো পজিটিভ হন, বাকি সবাই ছিলে ছিলেন নেগেটিভ। তবে শুরুতে যে ফল বিসিবি পেয়েছিল তাতে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, বিসিবির বায়ো-বাবলে ছিল ‘বড় ফুটো’।
এসব বিষয়ে সামনে আরও কঠোর হওয়ার কথা বললেন বিসিবির পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। তিনি বলেন, ‘অমাদের বায়ো-বাবল যথেষ্ট আপডেটের।প্রস্তুতির জন্য দুই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। সামনে আমাদের কঠোর হতে হবে আরও। খেলোয়াড়দের সুরক্ষা নিরাপত্তা সবার আগে।’
আদর্শ বায়ো-বাবল বলতে কিছু নেই তা আইপিএল দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে। আইপিএলে বায়ো-বাবল ছিল সবচেয়ে কঠোর। কিন্তু সেখানেও করোনা হানা দিয়েছিল। এরপর আইপিএল বন্ধ করতে বাধ্য হয় আয়োজকরা। সামনে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সিরিজ আয়োজন করবে বাংলাদেশ। এর আগে নিজেদের বায়ো-বাবল আরও উন্নত করার কথাও জানালেন সংশ্লিষ্টরা।