খেলাধুলা

সিরিজ জয় নিরঙ্কুশ হলো না 

ওয়ানডে সিরিজে বাগে পেয়েও শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলো না বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচ সুস্পষ্ট ব্যবধানে জিতেও কৌশলগত ভুলের কারণে শেষ ম্যাচে হারলো দল। ২-১ এ জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো। শেষ ম্যাচের হারে ছুটে গেল মূল্যবান ১০ পয়েন্ট। যদিও এখন পর্যন্ত ওয়ানডে সুপার লিগে শীর্ষ স্থানে থাকার সুখ অনুভব করছে বাংলাদেশ।

সিরিজের প্রাক্কালে বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ায় দেশ জুড়ে ছিল প্রচন্ড গরম। প্রথম দুই ম্যাচে টস ভাগ্য বাংলাদেশের পক্ষে যায়। টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগটা নিতে পারে দল। অতিথি ভালো বোলিং ও তুখোড় ফিল্ডিং করে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের হৃদপিন্ড কাঁপিয়ে দিলেও নির্ভরযোগ্য মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে স্বস্তির স্কোর গড়ে ম্যাচ জিতে। সাকিব আল হাসান , লিটন দাস এবং মোহাম্মদ মিঠুন সহ টপ ও মিডল অর্ডারের বাকি ব্যাটসম্যানরা দাঁড়াতেই পারেনি। তামিম সিরিজের প্রথম ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি পান। প্রথম দুই ম্যাচেই মেহেদি হাসান মিরাজ এবং মোস্তাফিজুর রহমানের চমৎকার বোলিং মোকাবিলায় অনভিজ্ঞ শ্রীলঙ্কান ব্যাটিং ভেঙে পড়ে। প্রথম দুই ম্যাচে সহজেই জিতে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে। 

সহজ এবং বড় জয়ে ২-০ তে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কাকে ‘বাংলাওয়াশ’ করছে এই স্বপ্ন বোনা শুরু হয়ে গেল। তবে ব্যাটিং নিয়ে যে শঙ্কা ছিল তাতেই যেন ধসে গেল সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ। দীর্ঘ দিন পর দলে ফেরা সাকিবের ব্যাটিংয়ে অনুশীলনের অভাব লক্ষণীয় ছিল। পেসার দুসমন্ত চামিরার দুরন্ত গতির সামনে সাকিব সহ টপ অর্ডারকে নড়বড়ে মনে হয়েছে। একমাত্র মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহ ছাড়া সবাইকে দ্বিধাগ্রস্থ মনে হয়েছে। 

শেষ ম্যাচে চার বদল নিয়ে নামে শ্রীলঙ্কা। আক্রমণই সেরা রক্ষণ এই কৌশল নিয়ে ব্যাটিং শুরু করে অতিথি দল। শুরুর পাওয়ার প্লে’র সুবিধা তুলে নিতে মারমার কাটকাট ভঙ্গিতে ব্যাট চালান দুই ওপেনার। বোলিং বদলে বাংলাদেশ দলের কিছুটা কৌশলগত ভুল এবং দূর্বল ফিল্ডিংয়ের  কারণে ২৮৬ রানের ম্যাচ জয়ী স্কোর গড়ে শ্রীলংকা। অধিনায়ক কুশাল পেরেরার ১২০ রানের সেঞ্চুরি দলকে বড় স্কোরের ভিত্তি এনে দেয়। ২০১৪ সালে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে জীবনের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন কুশাল পেরেরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচটিও হয়েছিল মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের সর্বশেষ সেঞ্চুরিও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পেলেন পেরেরা। ভেন্যুও সেই একই। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কুশাল পেরেরার দুটি সেঞ্চুরির ম্যাচের ফল একই, শ্রীলঙ্কার জয়। 

সিরিজের শেষ ম্যাচে অতিথি দলের বড় স্কোরের জবাবে ব্যাটিংয়ের শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়লো বাংলাদেশ ব্যাটিং। মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক এবং কিছুটা মুশফিক ছাড়া কেউ দাঁড়াতেই পারলো না চামিরা,হাসারাঙা এবং মেন্ডিসের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে। ৯৭ রানের বড় ব্যবধানে ম্যাচ জিতে অতিথি দল শুধু বাংলাওয়াশ এড়ায়নি, সুপার লীগের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অর্জন করলো।

তিন ম্যাচের সিরিজ বিশ্লেষণ জানাচ্ছে, সিরিজ জুড়েই বাংলাদেশ ভালো বোলিং করেছে, কিন্তু টপ অর্ডার এবং লেট অর্ডার ব্যাটিং ছিল নড়বড়ে। দলে থাকা সৌম্যকে সুযোগ না দিয়ে রিজার্ভ থেকে হঠাৎ নাঈম শেখকে এনে খেলিয়ে দেয়ার যোক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। 

তবে মুশফিক, তামিম, মেহেদি মিরাজের কিছু ব্যক্তিগত মাইল ফলক অর্জন সিরিজ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি। আর হ্যাঁ, শ্রীলংকার বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয় বড় অর্জন।

লেখক: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ক্রিকেট লেখক

আরও পড়ুন: *বাংলাদেশই ফেবারিট, কিন্তু শ্রীলঙ্কাও শক্তিমান *শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ দলে মাহমুদউল্লাহ নেই কেন? *স্পিন নাকি পেস, কী কৌশল সাজাচ্ছে শ্রীলঙ্কা?