জাতীয়

মগবাজারে বিস্ফোরণ: ভূমিকম্প মনে করেছিলেন এলাকাবাসী

রাজধানীর মগবাজারে রোববার (২৭ জুন) রাতে ঘটে যাওয়া একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনাকে ভূমিকম্প হিসেবে প্রাথমিক ধারণা করেছিলের ওই এলাকার বাসিন্দারা।  ঘটনার সময় বিকট শব্দ হয়। সময় ঝাঁকুনিতে আশপাশের দোকানপাট, অফিস এবং আবাসিক বাড়িতে থাকা বাসিন্দারা বাড়ির ছাদে এবং রাস্তায় নেমে আসেন।  চলে  আসে ফায়ারসার্ভিসসহ অন্যান্য বাহিনী।

এরপর ঢাকা কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ডেন্টাল ইউনিট এবং আদদিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের আসতে দেখে ঘটনার স্বাভাবিকতা বুঝেন স্থানীয়রা। এটি ভূমিকম্প নয়, একটি বিস্ফোরণ।  

সোমবার (২৮ জুন) মগবাজার ওয়্যারলেস রেলগেট এবং আশপাশের এলাকার দোকান ও বাড়ির মালিকদের সঙ্গে আলাপ করলে ঘটনায় তারা তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান।

দুর্ঘটনার স্থান থেকে কয়েকটি ভবন পরেই (আনুমানিক ১০০ মিটার দূরে) বড় মগবাজার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আহমেদ বাপ্পি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মগবাজারে স্মরণকালের বড় দুর্ঘটনা ঘটলো গতকাল (রোববার)।’

আহমেদ বাপ্পি বলেন, ‘আমার থাকার ঘরে এসি আছে, সেজন্য দর্জা-জানালা বন্ধ।  তাছাড়া সন্ধ্যার পরপর হওয়ায় এমনিতেই বন্ধ ছিল সব।  কিন্তু সেই বদ্ধ ঘরে এত বিকট আওয়াজ ঢুকলো তা আমাকে আতঙ্কিত করে তোলে।  বিষয়টি বুঝার আগেই চারতলা ভবনটি ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে।  এই বুঝি সব ভেঙে পড়লো।  দ্রুত আমরা ছাদে চলে যাই।  ঘটনা অনুধাবন করার চেষ্টা করি।  প্রথমে একে ভূমিকম্প মনে হলেও পাশে থাকা ঢাকা কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজে আসতে থাকা আহতদের চিত্র বদলে যায় গোটা এলাকার।’

তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি বীভৎস হয়ে উঠে।  মানুষের আহাজারি আর কান্নায় ভারী হয়ে উঠে এলাকা।  একেরপর এক আহতদের নিয়ে আসা হচ্ছিল হাসপাতালে। তখনো আমরা জানিনা ঠিক কি ঘটেছে।  পরে জানলাম প্রধান সড়কের পাশে একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।  এতে হতাহতের ঘটনাও আছে। ’ 

এর থেকে কিছুটা দূরে রেললাইনের পাশে আমিনুল ইসলাম (বয়স ৫৫, আনুমানিক) চা দোকানদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এই ধরনের আওয়াজ জীবনে শুনিনি। ঝাঁকুনির ফলে দোকানের তাকে থাকা পণ্য নিচে পড়ে যায়।’ 

ভূমিকম্পের কারণে বা ঠিক কি কারণে দোকান কেঁপে উঠে- তা বুঝে উঠার আগেই আমিনুল দ্রত দোকান থেকে বের হয়ে রেললাইনের পাশে অবস্থান নেন বলে জানান তিনি।

একই অভিজ্ঞতার কথা ওই এলাকার সুপার শপ এবং সাধারণ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। ওই এলাকার একটি ভবনের নিচতলায় ব্যাচেলর চাকরিজীবী ও ছাত্ররা থাকেন।  জানতে চাইলে সাইমন (ছাত্র) নামের একজন তার অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানান।

ওই সময় তিনি মৌচাক এলাকা থেকে বাসার উদ্দেশ্যে আসছেন। কিছুদূর আসার পর লোকজনের ছুটাছুটি দেখতে পান। ঠিক কি ঘটেছে তিনি বুঝে উঠতে পারেননি।  তবে আহত মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এটা তিনি নিশ্চিত হয়েছেন।  সামনে কয়েটি বাস ও পাশের দোকানগুলোতে মানুষের জটলা রয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনা মনে করে ভিড় এড়াতে বাসায় চলে যান তিনি।

বাসায় ঢুকে তিনি দেখতে পান, যা প্রতিবেদককে দেখিয়েছেন।  তিনি জানান, যখন তিনি বাসা থেকে বের হয়েছিলেন তখন রুম পরিস্কার করেই বের হয়েছিলেন।  কিন্তু বাসায় ফিরে দেখতে পান ধুলাবালিতে রুম ভরে আছে।  কিন্তু বুঝতে পারছে না কি হয়েছে।  পরবর্তী সময়ে জানতে পারেন রাস্তার পাশের দুর্ঘটনায় বিস্ফোরণে ওই বাড়িটি প্রবল ঝাঁকুনিতে এই অবস্থা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী শেখ আব্দুল জলিল রাইজিংবিডিকে বলেন, সন্ধ্যার দিকে আমি ও আমার ছেলে বাসায় বসে ছিলাম। হঠাৎ বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। তখন যেন পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠে। আমরা ৪-৫ মিনিট ধরে বুঝতে পারছিলাম না কি হয়েছে? এরপরে যখন আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলাম, তখন দেখলাম আমাদের চার তালা সকল গ্লাস ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখি বাহিরের চারপাশ ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে বাহিরে লোকজনের চিল্লাচিল্লি এর আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। পরবর্তী সময়ে নিচে এসে দেখলাম ভবনটির পেছনের অংশবিশেষ ভেঙে পড়েছে। ভবনটির সামনে গিয়ে দেখলাম নিচের দোকানে অনেক ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। আর বিস্ফোরিত ভবনের ঠিক উল্টো পাশে আমার অরিয়ান্টাল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নিচতলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত সব ক্লাস ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, শব্দটা এত বিকট হয়েছে যে আমি ও আমার ছেলে কোনোভাবেই মিলাতে পারছিলাম না যে এটা কি বিস্ফোরণের শব্দ। বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে কোনো আগুন দেখতে পাইনি, তবে ধোঁয়ায় আশেপাশে ঢেকেিছল।

এমন অনেক অভিজ্ঞতার নাম মগবাজার ট্র্যাজেডি। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির তৎপরতার প্রশংসা করেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, মগবাজারের ওয়্যারলেস এলকার একটি ভবনে বিস্ফোরণে অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছেন।