নরসিংদীতে তিন শ্রেষ্ঠ স্বেচ্ছায় রক্তদাতা পেলেন সম্মাননা। আর সম্মাননা প্রদান করেন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ব্লাড ডোনার্স ফাউন্ডেশন।
সম্মাননা প্রাপ্ত জেলার শ্রেষ্ঠ তিন রক্তদাতা হলেন হাসান আল মামুন, ফাহিম সাদেক সৌরভ ও জয়নুল আবেদীন। তার মধ্যে হাসান আল মামুন এপর্যন্ত স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়েছেন ৮০ বার, ফাহিম সাদেক সৌরভ ৫৯ বার ও জয়নুল আবেদীন ৩৭ বার। তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে জড়িত।
সম্প্রতি রায়পুরা উপজেলার মরজাল ওন্ডারপার্ক সংলগ্ন একটি হলরুমে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ব্লাড ডোনার্স ফাউন্ডেশনের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে তাদের এ সম্মাননা প্রদান করেন।
এতে ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন আবেদ টেক্সটাইল মিলের পরিচালক মাহবুবুর রহমান মনির। বিশেষ অতিথি ছিলেন রায়পুরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তফা খান, বাপেক্স পেট্রোবাংলার সাবেক ব্যবস্থাপক আতাউর রহমান, আমরা নরসিংদীবাসীর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তৌকির আহমেদ, বিশিষ্ট লেখক কলামিস্ট আলহাজ্ব সৈয়দ আব্দুল মালেক, নোরা পোল্ট্রিফিড অ্যান্ড মেডিসিনের চেয়ারম্যান উবাইদুর রহমান রাজিব ও ফাউন্ডেশনের সভাপতি এম.এ কাউছার আহমেদ প্রমুখ।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ব্লাড ডোনারস ফাউন্ডেশনটি ২০২০ সালের ২৬ জুন থেকে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি নিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত করে আসছে। গত এক বছরে সংগঠনটি ৩ হাজার জনের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় এবং স্বেচ্ছায় ৩৭০ জনেরও অধিক লোকদের রক্তদান করেছেন।
এছাড়াও সংগঠনটি রমজানে মাদ্রাসার এতিম এবং ৮০০ দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ ও অসুস্থ একজনকে ৩০ হাজার টাকা এককালীন প্রদান করেন, সেইসঙ্গে এলাকায় দুই শতাধিক ফলজ-বনজ চারা রোপণ করেছেন।
স্বেচ্ছায় ৮০ বার রক্ত প্রদানকারী সম্মাননা প্রাপ্ত হাসান আল মামুন নরসিংদী ব্লাড ডোনার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক। তার ভালোবাসা শুধু মানবতাকে ঘিরেই। জেলার সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের টাওয়াদী এলাকায় তার বাড়ি। মামুন (রক্তের গ্রুপ ও পজেভি) একজন প্রচার বিমুখ মানবসেবায় নিবেদিত প্রাণ। যেখানেই তিনি শুনেন ও দেখেন একজন মুমূর্ষু রোগীর আত্মীয়স্বজনরা রক্তের জন্য অসহায় অবস্থায় দিগ্বিদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন, সেখানেই তার পাশে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। বাড়িয়ে দিচ্ছেন সহযোগিতার হাত। স্বপ্ন দেখেন প্রতিদিন যেন কোনো একটি ভালো কাজে অংশ নেওয়া যায়।
আর্তমানবতার সেবায় গঠন করেছেন নরসিংদী ব্লাড ডোনার সোসাইটির নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আর এ সংগঠনের সদস্যদের কাজই অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো। তারই এক দৃষ্টান্ত তিনি।
মামুন জানান, ২০০০ সালের ২১ অক্টোবরে তার বয়স যখন ১৭, তখন তার ফুফাতো বোন শিরিনের সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করানোর সময় রক্ত দেন। এটাই তার প্রথম রক্তদান। এরপর থেকে মানুষের প্রয়োজনে তিনি তিন মাস অন্তর, এমনকি কোনো কোনো সময় খুব প্রয়োজন হলে দুই মাসের মাথায়ও স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন। এভাবে মানবিক কারণে এ পর্যন্ত তিনি ৮০ জন ব্যক্তিকে রক্তদান করেন।
ফাহিম সাদেক সৌরভ, রোটার্যাক্ট কাব অব নরসিংদীর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে রোটার্যাক্ট জেলা সংগঠন ৩২৮২ এর ডিস্ট্রিক্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি আমরা নরসিংদীবাসী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, নরসিংদী সরকারি কলেজ রোভার স্কাউটের সাবেক এস.আর.এম, গ্রিন ভয়েস নরসিংদী জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও নাটাব নরসিংদী জেলা শাখার জয়েন্ট সেক্রেটারিসহ বহু সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত। তাছাড়াও নরসিংদী জেলা যুব রেডক্রিসেন্টের উপ যুব প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফাহিম ২০০৩ সালে মৌচাক গাজীপুরে অনুষ্ঠিত রেডক্রিসেন্টের জাতীয় ক্যাম্পে মাহতাব আহমেদ নামে এক ব্যক্তির তৎকালীন সময়ে ৩২ বার রক্তদানের কথা শুনে নিয়মিত রক্তদানে অনুপ্রাণিত হন। তিনি সেদিন থেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যদি বেঁচে থাকি তবে একদিন রক্তদানে মাহতাব ভাইকে ছাড়িয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। এর পর থেকে ২০০৫ সালে তার বয়স যখন মাত্র ১৭ বছর, তখন থেকে তিনি সর্বপ্রথম নরসিংদী সরকারি কলেজে আয়োজিত রেডক্রিসেন্টের ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পে ১ম রক্ত ডোনেট করেন।
জয়নুল আবেদীন, নরসিংদী থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকের সম্পাদক ও প্রকাশক। এর সাথে নরসিংদী ব্লাড ডোনার সোসাইটির সভাপতিও। তাছাড় নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সদস্য ও রায়পুরা প্রেস ক্লাবের উপদেষ্ঠা। তিনি ১৯৮৯ সালের নরসিংদী সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত থাকার সময় যুব রেডক্রিসেন্ট কলেজ শাখার নেতৃত্বে ছিলেন। ওই সময় থেকে কলেজে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্যোগ নেন।