আশায় বুক বেঁধেছিল ইংল্যান্ড ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে। সেমিফাইনালে ওঠার পরপর আওয়াজ ওঠে, ‘ঘরে ফিরছে ট্রফি’। কিন্তু কোথায় কী! ১৯৯৬ সালের ইউরোর পর প্রথম কোনও বড় টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠেও একরাশ হতাশাকে বরণ করে নিতে হলো বেলজিয়ামের কাছে হেরে। তিন বছর পর আবারও আশায় বুক বাঁধছে ইংল্যান্ড, ৫৫ বছরের ট্রফি খরা কাটানো থেকে যে আর এক ধাপ দূরে। স্বপ্নের ফাইনালে তারা ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে ইতালির। এবার কি ট্রফি ঘরে ফিরবে নাকি রোমে যাবে?
বাংলাদেশ সময় রোববার (১১ জুলাই) দিবাগত রাত ১টায় ৬০ হাজার দর্শকের সামনে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড ও ইতালি শিরোপার লড়াইয়ে নামছে। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে সনি টেন ২ ও সনি সিক্স।
ইংল্যান্ড কখনও জেতেনি ইউরো। আর ইতালি ট্রফি নিয়েছিল একবার, তাও সেই ৫৩ বছর আগে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে তাই তাদেরও লম্বা সময়ের শিরোপা খরা কাটানোর মিশন। এই ম্যাচে ইংল্যান্ডের ১১ ফুটবলারের সঙ্গে প্রতিপক্ষ সমর্থকদেরও সামলাতে হবে ইতালিকে। কারণ হোম ম্যাচ খেলার সুবিধা পাচ্ছে থ্রি লায়নরা। এই (পুরোনো) ওয়েম্বলিতে ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ তারা জিতেছিল জার্মানিকে হারিয়ে, যা এখন পর্যন্ত তাদের একমাত্র সাফল্য। পুরো দেশবাসীর আশা, গ্যারেথ সাউথগেট ও তার খেলোয়াড়রা এবার শাপ মোচন করবেন।
ইংল্যান্ডের জনগণ কতটা আশাবাদী, তার একটি প্রমাণ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে সোমবার ব্যাংক ছুটির ঘোষণা দিতে চাপ দিয়েছেন। অবশ্য যদি জেতে। মানে পুরোপুরি উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ইংরেজরা। কিন্তু প্রতিপক্ষ যখন ইতালি, তাদের এই প্রস্তুতি না মাটি হয়ে যায়। ৩৩ ম্যাচ ধরে রবার্তো মানচিনির দল অজেয়, প্রায় তিন বছর।
তাছাড়া ইতিহাস আছে ইতালির পক্ষে। কোনও বড় টুর্নামেন্টে তারা ইংল্যান্ডের কাছে কখনও হারেনি। এটাই হ্যারি কেইন ও তার সতীর্থদের আশঙ্কায় রাখছে। কিন্তু শেষ ষোলোতে জার্মানি ও সেমিফাইনালে পিছিয়ে পড়েও ডেনমার্ককে হারানোর অভিজ্ঞতা তাদের উজ্জীবিত রাখতে যথেষ্ট। এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না তারা।
কেইন বলেছেন, ‘এটা হতে যাচ্ছে বিশেষ দিন। কিন্তু ম্যাচ শেষে এক দল বিজয়ী, আরেক দল পরাজিত। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা বিজয়ী হবো। প্রত্যেকের জন্য এই দিনটাকে বিশেষ করতে চাই আমরা।’
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক গ্রু পর্বে গোলের দেখা না পেলেও এখন তার নামের পাশে চারটি গোল। রহিম স্টারলিংয়ের চেয়ে একটি বেশি। দুজনে মিলে নকআউটে প্রতিপক্ষকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন। ২০১৮ বিশ্বকাপের মতো ব্যর্থতার গ্লানিতে ডুবতে হবে না দলকে, বিশ্বাস সাউথগেটের, ‘আমি মনে করি গত তিন বা চার বছর ধরে খেলোয়াড়রা অনেক শিখেছে।’
অবশ্য অভিজ্ঞ অধিনায়ক জর্জিও কিয়েল্লিনি ও লিওনার্দো বোনুচ্চির রক্ষণভাগের সামনে বড় ধরনের পরীক্ষা দিতে হবে কেইন-স্টারলিংদের। রোমে গ্রুপ পর্বে তিনটি জাদুকরী রাত পার করা ইতালি বিশ্বের শীর্ষ র্যাংকিংধারী বেলজিয়াম ও স্পেনকে হারিয়ে এই ফাইনালে। ইনসিগনে, ইম্মোবিলে ও চিয়েসা পরীক্ষা নেবেন ম্যাগুইরে, ওয়াকার ও স্টোনসের।
ইতালির মিডফিল্ডার মার্কো ভেরাত্তি বলেছেন, ‘আমি মনে করি এটা হতে যাচ্ছে মহাকাব্যিক ফাইনাল এবং ইতিহাস গড়ার ম্যাচ। ইংল্যান্ড শক্তিশালী দল, আমরা খুব কঠিন দলের মুখোমুখিক হচ্ছি। আর তারা ঘরের মাঠে খেলছে। এই ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা আমাদের জন্য স্বপ্নের।’
১৯৬৮ সালে প্রথম ইউরো জয়ের পর ইতালি দুইবার বিশ্বকাপ জিতেছিল- ১৯৮২ ও ২০০৬ সালে। গত বিশ্বকাপে তাদের উঠতে না পারার ব্যর্থতার ছিল অবাক করার মতো। তবে যা হয়েছে, ভালোই হয়েছে। ওই অঘটনের পরই তো মানচিনি এলেন এবং বদলে দিলেন ইতালির ভাগ্য। এবার দেখা যাক, তার দল টানা ৩৪ ম্যাচ অজেয় থেকে রোমে ট্রফি নিয়ে যাবেন নাকি তা ফিরে যাবে ইংল্যান্ডের ঘরে!
ইতালির সম্ভাব্য লাইনআপ: দোনারুম্মা, ডি লরেঞ্জো, কিয়েল্লিনি, বোনুচ্চি, এমারসন, জোর্গিনহো, ভেরাত্তি, বারেল্লা, চিয়েসা, ইনসিগনে, ইম্মোবিলে।
ইংল্যান্ডের সম্ভাব্য একাদশ: পিকফোর্ড, ওয়াকার, স্টোনস, ম্যাগুইরে, শ, রিচি, ফিলিপস, সাকা, মাউন্ট, স্টারলিং, কেইন।