বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল সোমবার (১২ জুলাই) সকালে রূপগঞ্জে কর্ণঘোপে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ তথা সেজান জুস কারখানা পরিদর্শ করেন। সেখানে কারখানার শ্রমিক ও নিহত-আহত শ্রমিকদের স্বজনদের সাথে কথা বলেন। ৩৪ হাজার বর্গফুটের প্রতি ফ্লোরের গেট অগ্নিকাণ্ডের সময় তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল যা শ্রম আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করেন তারা।
নেতারা কারখানার বিভিন্ন তলা ঘুরে দেখেন। তারা দেখেন কারখানার নীচ তলায় অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, কেমিক্যালসহ দাহ্য পদার্থের গোডাউন যা কারখানা আইনের পরিপন্থি। ৩৪ হাজার বর্গফুটের ৬ তলা কারখানায় বিল্ডিং কোড অনুযায়ী কমপক্ষে ৪টি সিঁড়ি এবং বের হওয়ার সিঁড়ি বাইরের দিক থাকা প্রয়োজন যা ছিল না। সেখানে ২টি সিঁড়ি ভেতর দিকে ছিল যার একটি বন্ধ ছিল অন্যটিতে কোন বৈদ্যুতিক বাতি ছিল না, সেখানে সিঁড়ি ছিল অন্ধকার ও অপ্রশস্ত, শ্রমিকদের মোবাইলে লাইট জ্বালিয়ে উঠানামা করতে হতো।
তারা দেখেন, চতুর্থ তলায় এখনও আগুনের ধোঁয়া উড়ছে এবং ৫ তলায় আগুন জ্বলতে দেখতে পান। ৪র্থ তলায় একটি কালো ভষ্মিভূত স্তুপের মধ্য থেকে কয়েকটি হাড় তুলে একজন শ্রমিকের স্বজন চিৎকার করে বলে উঠেন এটি তার মৃত মেয়ের হাড়। তার মেয়ে ঐ ফ্লোরে কাজ করতো। এ ঘটনায় নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ৫দিন পরে গিয়েও যেখানে মানুষের হাড়গোড় পাওয়া যায় তখন ২দিন আগেই ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল কিভাবে ঘোষণা করতে পারেন সেখানে আর কোনো মৃতদেহ নাই?
পরিদর্শন শেষে করাখানা গেটে নিহত-আহত শ্রমিকদের স্বজন, স্থানীয় জনসাধারণেরে এক সমাবেশে নেতারা বলেন, সেজান জুস এর অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিকের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনা নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি মালিক, সরকার প্রশাসনের অবহেলা, গাফিলতিজনিত ও কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। একটি কারখানা করতে হলে ২৩ ধরনের প্রতিষ্ঠানের অনুমতি লাগে অথচ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে, শ্রম আইন-শিল্প আইন লঙ্ঘন করে দিব্যি কারখানা চালিয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। ফলে এই ঘটনার দায় কোন মতেই সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও সরকার এড়াতে পারে না। ১২/১৪ বছরের শতাধিক শিশুদের দিয়ে ঐ কারখানায় কাজ করানো হতো যা শ্রম আইনে নিষিদ্ধ। অগ্নি নির্বাপনের জন্য কোনো যন্ত্র এবং ফোম ছিল না। ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টকেই-এ দায় নিতে হবে।