নীরবে দাঁড়িয়ে আছে ৩১৬ বছরের একটি চাপালিশ গাছ। কাপ্তাই হ্রদের তীর ঘেঁষে শহরের ডিসি বাংলো প্রবেশের মুখে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে এ গাছটি।
চাপালিশ গাছটি পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয়। গাছটির নিচে বসলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। মনের মধ্যে এনে দেয় এক অনাবিল প্রশান্তি। বিশাল আকৃতির এ গাছটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়। সঙ্গে রয়েছে পরগাছাও।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ সকাল বিকাল গাছটির নিচে গিয়ে একটুখানি শীতল পরশ নেয়। গাছটিকে ঘিরে পাখির কিচির মিচির শব্দে মনে এক অজানা অনুভূতির সৃষ্টি হয়। গাছটির ডালে ডালে বিচরণ করে নানান রকমের পাখি। গাছটিকে জড়িয়ে জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন লতা-পাতার গাছ।
গাছটির নিচে বসে কাপ্তাই হ্রদের নীল জলরাশি দেখতে খুবই অপূর্ব । রাঙামাটি ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ডিসি বাংলো পার্কে ঘুরতে এলে পর্যটকদের সবার আগেই দৃষ্টি কেড়ে নেয় এ বিশালকৃতির গাছ। ৩১৬ বছরের চাপালিশ গাছটির দৈর্ঘ্য ১০৩ মিটার ও পরিধি ২৫ মিটার। গাছটি এতো পরিধি যে চোখ দিয়ে একবারে পুরোপুরি দেখা সম্ভব হয়ে ওঠেনা।
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জীবন’ এর সাধারণ সম্পাদক সাজিদ বিন জাহিদ মিকি বলেন, সুদীর্ঘ তিন শতক সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষটি পাহাড়ের প্রাচীনতম বৃক্ষ। কাপ্তাই হ্রদের তীরবর্তী এই গাছটিই পুরাতন রাঙামাটির সাক্ষ্য বহনকারী। গাছটি ঘিরে শহরে বেড়ে উঠেছে কয়েক প্রজন্ম। গাছটিতেও বয়সের ছাপ পড়েছে। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এর অভাব রয়েছে। যদিও প্রশাসনিকভাবে গাছের চারিপাশে বলয় নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরও অসচেতন কিছু মানুষের দ্বারা গাছের বর্ধিত শিকড় অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৫ ফুট পরিধির এই বৃক্ষের প্রতি আরো সজাগ দৃষ্টি ও সঠিক পরিচর্যা খুবই জরুরী। শহরের বাসিন্দাদের কাছেও খুব আপন গাছটি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, জেলা প্রশাসকের বাংলো এলাকায় বিশালকৃতির চাপালিশ গাছটি মূলত পরিচর্যার কারণে দীর্ঘ বছর ধরে এখনো জীবিত রয়েছে। ভালো পরিবেশ পেলে গাছগুলো অনেক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। ইংরেজিতে গাছটিকে Monkey Jack বলে। বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus chama, সমনাম Artocarpus chaplasha, Moraceae পরিবারের উদ্ভিদ।
তিনি বলেন, গাছটিতে বিভিন্ন ধরনের পরগাছাও রয়েছে। এসব পরগাছা সাধারণত এ গাছটি থেকে তাদের খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। এই গাছটির ফল বিভিন্ন পশু-পাখিও খেয়ে থাকে। চাপালিশ হলো কাঁঠাল প্রজাতির বৃক্ষ। কাঁঠালের চাইতে চাপালিশ কিন্তু অনেক বড় আকৃতির এবং সোজা গাছ হয়। বন্যপ্রাণীর জন্য কাঁঠাল এবং চাপালিশ দুটোই কিন্তু খুব প্রিয় খাবার।