শনিবার রাতে বগুড়া থেকে ‘ফিড’ ভর্তি একটি ট্রাক ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে পাবনায় চালকের অগোচরে চলন্ত ট্রাক থেকে ৩৫ বস্তা ফিড রাস্তায় পড়ে যায়। রাতে পাবনার আমিনপুর থানা পুলিশের একটি টহল দল ফিডের বস্তা কুড়িয়ে ট্রাকচালককে খুঁজে বের করে ফিরিয়ে দেয়। পুলিশের এমন মহতী কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সবাই।
পাবনা জেলা পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতে বগুড়া থেকে ‘ফিড’ ভর্তি একটি ট্রাক ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাত একটার দিকে পাবনার কাশিনাথপুর হয়ে আমিনপুর থানার কাজিরহাট ঘাটে পৌঁছায় ট্রাকটি। ঘাটে পৌঁছানোর পর ট্রাকে সাজানো বেশকিছু ফিডের বস্তা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন ট্রাকচালক ও তার সহযোগীরা।
এদিকে, আমিনপুর থানা সড়ক অতিক্রম করে বাধেরহাট এলাকায় পৌঁছানোর আগে চলন্ত ট্রাক থেকে ফিডের বস্তাগুলো রাস্তায় পড়তে থাকে। এ সময় সেই রাস্তায় রাত্রিকালীন টহল ডিউটিতে নিয়োজিত ছিলেন আমিনপর থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রকিবউদ্দিন ও চারজন সঙ্গীয় পুলিশ সদস্য। কর্তব্যরত টহল দলটির চোখে ধরা পড়ে রাস্তার উপর পড়ে থাকা ফিডের বস্তাগুলো।
তাৎক্ষণিকভাবে এএসআই রকিব ও সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যরা একে একে ৩৫টি ফিডভর্তি বস্তা সংগ্রহ করে একজন ভ্যানচালককে ডেকে ভ্যানে তোলেন। এসব ফিডের আনুমানিক মুল্য ৭০ হাজার টাকা। তারপর যাতায়াতের রুট ধারণা করে ভ্যানচালককে নিয়ে কাজিরহাট ফেরিঘাটের বিআইডব্লিউটিসির কাউন্টারের সামনে যান ওই পুলিশ সদস্যরা।
এরপর এএসআই রকিব খুঁজতে থাকেন ফিডবোঝাই ট্রাকটি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়েও যান ট্রাকচালক বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ট্রাকচালক শফিকুল ইসলামকে। যার ট্রাকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ঢাকা মেট্রো-ট ১৬-৭৩৪০। সেই মুহুর্তে ট্রাকচালক শফিকুলের কাছে ভ্যানভাড়া দেওয়ারও টাকা ছিল না।
তখন এএসআই রকিব নিঃস্বার্থভাবে নিজের টাকা দিয়ে ভ্যানভাড়া পরিশোধ করে ট্রাকচালককে আশ্বস্ত করেন। ফিরিয়ে দেন ফিডভর্তি বস্তাগুলো। আর ফিডের বস্তাগুলো ফিরে পেয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচেন ট্রাকচালক শফিকুল। কৃতজ্ঞতা জানান পুলিশকে এভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। ট্রাকচালক শফিকুল ছাড়াও সেখানে উপস্থিত রুপপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম উজ্জ্বল ও স্থানীয় মানুষ পুলিশের এমন কাজে অভিভূত ও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা পুলিশের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠায় মুগ্ধ হন।
এ বিষয়ে রুপপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম উজ্জ্বল বলেন, পুলিশ যে এতো আন্তরিকভাবে কাজ করে মানুষের জন্য তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ধন্যবাদ জানাই এএসআই রকিব ও তার সহযোগিদের।
এএসআই রকিব উদ্দিন বলেন, রাস্তায় বস্তাগুলো পড়ে থাকতে দেখে ধারণা করেছিলাম চলন্ত ট্রাক থেকে পড়ে গেছে। ট্রাকচালক ও হেলপার টের পায়নি। এতগুলো বস্তা হারিয়ে নিশ্চয়ই তারা দিশেহারা হয়ে যাবে। ফিড ভর্তি বস্তাগুলো কুড়িয়ে তাদের ফিরিয়ে দিতে পেরে নিজের কাছেও ভালো লেগেছে।
পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম এএসআই রকিবউদ্দিন ও সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের পেশাদারিত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এই ইতিবাচক কাজটি পাবনা জেলা পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। তিনি এএসআই রকিব উদ্দিন ও তার সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেন।