এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘করোনার কারণে বিভিন্ন দেশে কর্মী যাওয়ার চেয়ে দেশে ফিরে আসার হার অনেক বেশি। ফলে, দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স খাতের জাদু শেষ হতে চলেছে।’
রোববার (৮ আগস্ট) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২০২২ বাস্তবায়ন: পিছিয়ে পড়া মানুষেরা কীভাবে সুফল পাবে?’ শীর্ষক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপের সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন—ড. মুশতাক রাজা চৌধুরী, রাশেদা কে চৌধুরী, শাহীন আনাম, ড. ইফতেখারুজ্জামান, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, আসিফ ইব্রাহিম প্রমুখ।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। করোনা পরিস্থিতির কারণে ৮০ শতাংশ মানুষ খাদ্য-ব্যয় কমিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি, জুলাই মাসে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ রপ্তানি কমেছে। রেমিট্যান্স আয় ২৮ শতাংশ কম এসেছে। বিশেষজ্ঞরা একমত হবেন, রেমিট্যান্স খাতের যে জাদু, সেটা সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। কারণ, মানুষ গেছে কম, এসেছে আগের চেয়ে বেশি। রপ্তানিতে আমরা আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারব কি না, সেটা নিয়েও শঙ্কা আছে।’
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এ অবস্থায় সরকার নতুন মুদ্রানীতি দিয়েছে। মুদ্রানীতি সঠিক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, সার্বিক চাহিদা বৃদ্ধির জন্য আরও বেশি তারল্য অর্থনীতিতে দেওয়া উচিত। বিভিন্ন ধরনের সুদের হার কমানোর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো সঠিক বলে আমি মনে করি।’
মুদ্রানীতির দুর্বলতা হিসেবে তিনি বলেন, ‘মুদ্রানীতির সব থেকে বড় দুর্বলতা মুদ্রানীতিতে ব্যক্তি খাতের ঋণের যে প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে, তার কাছেও যেতে পারছে না। ব্যবসায়িক গোষ্ঠীসহ অনেকে বলেছিলেন, সুদের হার কমিয়ে দিলে বিনিয়োগ দ্রুত বাড়বে। এই তত্ত্ব যে সঠিক ছিল না, এটা আজ পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে। স্প্রেড ৪ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। এরপরও ব্যাংকে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিলের রেট বাড়িয়ে এ তারল্য তুলে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এটা রোগের সমাধান নয়, রোগের যে উপসর্গ আছে তা আপনি দেখাশোনা করছেন। চেষ্টাটা হতে হবে তারল্যকে অর্থনীতিতে সঞ্চালন করা।‘
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে অর্থনীতির উচ্ছ্বাসের নিচে যে কালো ছায়া আছে, সেটা হলে আমাদের ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কোনোভাবেই আমরা বাড়াতে পারছি না। এ বছর যে হিসাবটি প্রাথমিকভাবে এসেছে, সেটা গত বছরের থেকে আরও ২-৩ শতাংশ কমে গেছে। অর্থাৎ ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ নেমে গেছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হার।‘
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘২০২০-২০২১ হিসাব বছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ দশমিক ২০ শতাংশ, যা পরে সংশোধন করে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ ধরা হয়েছে। এই ৫ দশমিক ২০ শতাংশ কোনো অবস্থায়ই টিকবে না। আমরা আগেই সমালোচনা করেছিলাম, প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ পরিসংখ্যানটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রশংসা করেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘জিডিপির প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এখন পরিসংখ্যান ব্যুরো যে তত্ত্ব দিয়েছে, তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে, জাতীয় পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে সুস্থতা ফিরে এসেছে। বিবিএসের বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ১ হাজার ৬০০ পরিবারের ওপর আমরা জরিপ চালিয়েছি, তাতে পরিষ্কার দেখতে পেয়েছি, ৮০ দশমিক ৬০ শতাংশ মানুষ খাদ্যের ব্যয় কমিয়েছে। ৬৪ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ অন্যান্য ব্যয় কমিয়েছে। ঋণ নিচ্ছে ৬০ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ। ৪৭ দশমিক ২০ শতাংশ মানুষ প্রোটিন খাওয়া কমিয়েছে। তারা আর মাছ-মাংস খাচ্ছে না। কেউ কেউ তিন বেলার বদলে একবেলা বা দুই বেলা খাচ্ছেন। ১০ শতাংশ মানুষ শিশুখাদ্য কেনাও কমিয়েছে।‘