অ্যাস্টন টার্নার সাকিবের হাওয়ায় ভাসানো বলটা যেভাবে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিলেন তা স্রেফ ছেলেমানুষি বললেও ভুল হবে। শুধু টার্নার নন, অজিদের শেষ ব্যাটসম্যান অ্যাডাম জাম্পাও তো একই শটে একই ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন।
বাংলাদেশের দেওয়া ১২৩ রানের লক্ষ্য ছুঁতে নেমে অস্ট্রেলিয়া অলআউট ৬২ রানে! অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বনিম্ন এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো দলের সর্বনিম্ন রান। আগেই সিরিজ জেতার পর অস্ট্রেলিয়াকে এই লজ্জাটা দেওয়ার বাকি ছিল মাহমুদউল্লাহদের।
সাকিব চওড়া হাসি দিয়ে হাসছেন। ওদিকে সৌম্য, মেহেদী, নাসুম, আফিফদের দৌড়াদৌড়ি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরেকটি জয়। ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়। ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের একটা স্টাম্প সংগ্রহ করতেই ওতো দৌড়ঝাঁপ। শোনা গেল, নাঈম, শামীম নাকি স্টাম্প ভাগে পাননি। পরবর্তীতে কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার রুম থেকে তাদের জন্য স্মারক স্টাম্প দেওয়া হয়।
শুরুতে টার্নারের উইকেট নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তা সাকিবের কাছে বিশেষ কিছু হয়ে থাকবে। তার উইকেট নিয়ে অনন্য এক রেকর্ড গড়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ৯৫ উইকেট নিয়ে সাকিব এ সিরিজ শুরু করেছিলেন। সিরিজের প্রথম ম্যাচে তিন উইকেট নিয়ে বাঁহাতি স্পিনার উইকেটের সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু চতুর্থ ম্যাচে কোনো উইকেট তো নিতেই পারেননি, উল্টো ৪ ওভারে ৫০ রান দিয়ে সবচেয়ে বাজে বোলিংয়ের রেকর্ডও গড়েন। সেদিন এক ওভারে ৫ ছক্কাও হজম করেছিলেন।
একদিনের বিরতির পর সাকিব যেন আপন আলোয় উদ্ভাসিত। ৩.৪ ওভারে ১ মেডেনে ৯ রানে পেয়েছেন ৪ উইকেট। বিশ্বের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে একশ টি-টোয়েন্টি উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন। সঙ্গে বিশ্বের প্রথম অলরাউন্ডার হিসেবে এ ফরম্যাটে এক হাজার রান ও একশ উইকেটের এলিট ক্লাবও খুলেছেন বাংলাদেশের সুপারস্টার।
প্রথম ওভারে অজি অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে বোল্ড করেন। এরপর টার্নার, নাথান এলিস ও জাম্পার উইকেট নিয়ে অজিদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় লজ্জাটা দিয়েছেন। ৭৯ রানে অস্ট্রেলিয়ার আগের সর্বনিম্ন রানের অলআউটের রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অভিষেকের এক বছর আগে। ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাউদাম্পটনে ঘটেছিল ওই অঘটন।
সাকিবের স্পিন বিষে নীল হওয়ার আগে শরিফুলের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া সাইফউদ্দিনও দারুণ বোলিং করেছেন। ‘নাকাল বলে’ দ্যুতি ছড়িয়ে ডানহাতি পেসার ১২ রানে পেয়েছেন ৩ উইকেট। আর শুরুতে বরাবরের মতো এবারো দারুণ নাসুম আহমেদ। ড্যান ক্রিস্টিয়ান (৩) ও মিচেল মার্শকে (৪) আটকে দেওয়ার কৃতিত্বটা তো তারই।
বোলারদের দিনে ব্যাটসম্যানদের প্রশংসা যত কম করা যাবে ততই ভালো। এ সিরিজে পাওয়ার প্লেতে সবেচেয়ে বেশি রান করার পরও ১০ ওভারে স্কোর মাত্র ৬০। প্রথম ৬ ওভারে সংগ্রহ ৪৬ রান। পরের ৯০ বলে বাংলাদেশের পুঁজি মাত্র ৭৯! সব মিলিয়ে স্কোরবোর্ডে রান ১২২ রান।
প্রথম চার ম্যাচে দুই অঙ্ক ছুঁতে না পারা সৌম্য এবারো দলে সুযোগ পেয়ে যান। তবে ওপেনিংয়ের পরিবর্তে তাকে খেলানো হয় চারে। ভাগ্য ফেরেনি। ১৮ বলে করেন ১৬ রান। ওপেনিংয়ে নাঈমের সঙ্গী মেহেদী। দুই তরুণের শুরুর আগ্রাসনে বাংলাদেশ কিছুটা এগিয়ে যায়। কিন্তু মধ্য ওভারগুলোতে প্রত্যেক ব্যাটসম্যানই এলোমেলো। দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে হাল ছেড়ে দেন অতি সহজে। নাঈম ২৩ বলে সর্বোচ্চ ২৩ রান করেন। সাকিব ২০ বলে করেন ১১। এছাড়া মাহমুদউল্লাহর ১৯ ও আফিফের ১০ রান বাংলাদেশকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেয়। ওই রানটাও বড় হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার জন্য। ৬০ রানের বিশাল হারে দুঃস্বপ্নের এক সফর শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। মিরপুর থেকেই তারা চলে যাবেন বিমানবন্দরে। রাত ১টায় দেশের ফ্লাইট ঠিক করা আগের থেকেই।
৩-২ হয়নি, হয়েছে ৪-১। মাহমুদউল্লাহরা বিজয়ের আনন্দে আনন্দমাখা সিরিজ শেষ করেছে। সাতদিনে পাঁচ টি-টোয়েন্টি। সাতদিনের এ রোমাঞ্চ নিশ্চিতভাবেই অনন্তকালের অর্জন হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।