২০০৫ সালের এই দিনে সারাদেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় মুন্সিগঞ্জ বাদে দেশের ৬৩ জেলার গুরুত্বপূর্ণ ৪৫০টি স্থানে প্রায় পাঁচশ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। এই হামলায় নিহত হন দুজন এবং আহত হন দুই শতাধিক।
দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ১৬ বছর পার হলেও এখনও ৪৩ মামলার বিচার ঝুলে আছে। সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরায় সিরিজ বোমা হামলার চার মামলার রায়ে সাত আসামিকে ১৩ বছর করে কারাদণ্ড, একজনকে ১০ বছর এবং আরও চার জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর খালাস পান দুজন। সাতক্ষীরা প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এ রায় ঘোষণা করে। আর সাক্ষী না আসায় বিচার শেষ হচ্ছে না বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জেএমবি’র সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে মামলা হয়েছিল ১৫৯টি। তদন্ত শেষে ১৬টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয় ১৪৩ মামলার। এরমধ্যে নিম্ন আদালতে ১০০টি মামলার বিচার কাজ শেষ হয়েছে। বিচারাধীন আছে আরও ৪৩ মামলার কার্যক্রম। এসব মামলায় এজাহারে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছিল ২৪২ জনকে। আর চার্জশিটে আসামি করা হয়েছিল এক হাজার ১২১ জনকে। এরমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ৯৮৮ জনকে। আরও জানা যায়, এসব মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডসহ ২৬৩ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দেন আদালত। খালাস পান ১২২ জন।
বিচার বিলম্বিত হওয়া সম্পর্কে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু জানান, ‘ঢাকার আদালতে ১৭টি মামলা ছিল। এরমধ্যে কয়েকটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও কয়েকটির বিচার শেষ করে আসামিদের সাজা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পাঁচটি মামলা বিচারাধীন আছে। সেগুলো সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় মামলার বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীদেরও পাওয়া যায়নি। সাক্ষীদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। পুলিশও চেষ্টা করছে সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে। আবার করোনার কারণে বিচার বন্ধ ছিল।’
তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে অনেকের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর এবং এ বছর অনেক দিন আদালত বন্ধ ছিল। কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে। এখন সাক্ষীদের হাজির করে বিচার শেষ করার চেষ্টা করবো।’
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টে একই সময়ে দেশের ৬৩ জেলার সাড়ে ৪০০ জায়গায় একযোগে প্রায় ৫০০টির বেশি বোমা হামলা চালিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয় জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এই সিরিজ বোমা হামলায় দুজন নিহত হন। আহত হন শতাধিক মানুষ।
জঙ্গি কার্যক্রমের কারণে নিষিদ্ধ করা হয় সংগঠনটি। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে বিভিন্ন স্থানে মামলা হয় যার সংখ্যা পরবর্তীতে দাঁড়ায় ১৫৯টি।
বোমা হামলার মূল পরিকল্পনাকারী শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানিসহ শীর্ষ কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।