ক্যাম্পাস

যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াবেন যেভাবে

কিছু মানুষকে দেখবেন আপনার খুব ভালো লাগে আর কিছু মানুষকে বিরক্তিকর। কিছু মানুষ সহজেই আপনাকে সব বুঝিয়ে দিতে পারেন আর কিছু মানুষ সারাদিন কথা বলেও বোঝাতে পারছেন না। পার্থক্যটা কমিউনিকেশন স্কিলে। কমিউনিকেশন স্কিল ব্যপারটা আসলে কী? বর্তমান কর্পোরেট জগতে যে স্কিলটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে কমিউনিকেশন স্কিল। এর বাংলা অর্থ যোগাযোগ দক্ষতা। যোগাযোগ আমরা সারাক্ষণ করছি একে-অপরের সঙ্গে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় আমরা ভুল কমিউনিকেশন করি। ফলে আমরা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাই। যার সঙ্গে যোগাযোগ করছি, তার কাছে বিরক্তিকর হয়ে উঠি। এজন্য প্রয়োজন ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন, যা দিয়ে মানুষের মন জয় করা সম্ভব।

ব্যাপক অর্থে বলতে গেলে অন্যের দেওয়া তথ্য সঠিকভাবে বুঝতে পারা এবং নিজের তথ্য অন্যের কাছে সহজে বোধগম্য করে তোলার যে দক্ষতা, তা হলো কমিউনিকেশন স্কিল। এখানে ‌‌‌‘যোগাযোগ’ হতে পারে মানুষ বা যন্ত্র অথবা কোনো প্রাণীর সঙ্গে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগ দক্ষতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কর্মজীবন, ব্যক্তিগত জীবন বা সামাজিক সব ক্ষেত্রেই যোগাযোগ দক্ষতার প্রয়োজন। 

প্রাচীন যুগে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ায় চেপে নিজে গিয়ে বা দূত মারফত খবর দেওয়া। বর্তমান যুগে যোগাযোগের অনেক সহজ মাধ্যম রয়েছে। মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ অন্যতম। কর্মজীবন বা পেশাগত জীবনে উন্নতি করতে হলে আপনাকে যোগাযোগে দক্ষ হতে হবে এবং বিশেষ কিছু টিপস মেনে চলতে হবে। পেশাগত জীবনে সর্বপ্রথম নিজের কর্ম দক্ষতা বাড়াতে হবে। নিজের কর্ম দক্ষতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আপনার কর্মদক্ষতা যতো বাড়বে, আপনি ততটাই সফল হবেন।

কমিউনিকেশন স্কিল নেটওয়ার্কিং স্কিল ডেভেলপমেন্টের অন্যতম একটি অংশ। ক্যারিয়ার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন স্কিলের প্রয়োজনীয়তা অনেক। তাছাড়া সামাজিক ও কর্মজীবনে নেটওয়ার্কিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। যেমন- চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে, ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে, সহকর্মীদের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইত্যাদি। নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হলে কোনো ধরনের বাছাই করা যাবে না। জীবনে সব ধরনের লোকজনের প্রয়োজন হয় কোন না কোন ক্ষেত্রে, তাই উঁচু-নিচু ভেদাভেদ ভুলে সবার সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন দুষ্ট লোকের সাথে নেটওয়ার্কিং গড়ে না ওঠে, এতে আপনার জন্য ক্ষতিকর। তাই ধনী গরিবের ভেদাভেদ ভুলে সবার সাথে পরিচয় বহাল রাখতে হবে। এতে আপনি চলার পথে অনেক সহায়তা পাবেন।

সব ক্ষেত্রেই সফলতার জন্য মূখ্য ভূমিকা পালন করে কমিউনিকেশন স্কিল। আমরা আমাদের নিত্য দিনে পরিচিত হই অনেক মানুষের সাথে কিন্তু সবার সাথে আমাদের সম্পর্ক একরকম হয় না। কারণ, আমরা তাদেরই পছন্দ বা প্রাধান্য দেই, যারা আমাদের কাছে খুব সহজেই মনোভাব প্রকাশ করেন কিংবা আমাদের কথা বুঝতে পারেন। তাছাড়া কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা মানে এই নয় যে, জোরালো বক্তব্য দিতে পারতে হবে। কমিউনিকেশন স্কিল বলতে, যার সাথে কথা বলা হবে, তার কথা বলার ভঙ্গিমা কিংবা ধরনের সাথে মিলিয়ে নিয়ে কোনো কিছু বোঝাতে পারার সক্ষমতা। যেকোনো বিষয় সহকর্মী কিংবা ক্রেতা সবার কাছেই সহজভাবে বোঝাতে পারা। 

এছাড়া নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রেও সবার আগে এই গুণটির দরকার হয়। কমিউনিকেশন স্কিল ভালো হলে সহজেই-কোওয়ার্কারদের সাথে বোঝাপড়া করা সম্ভব। সবার সাথে যতবেশি কমিউনিকেশন বৃদ্ধি পাবে, আইডিয়া শেয়ারিং তত বেশি হবে এবং বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া শেয়ারিংয়ের মাধ্যমেই প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে! তার সাথে স্কিল ডেভেলপও করবে। তাই আমাদের প্রয়োজন কমিউনিকেশন স্কিলে দক্ষ হয়ে ওঠা।

ইফেক্টিভ কমিউনিকেশনে দক্ষ হতে চাইলে কতগুলো নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন। যেমন-

১. যার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন, তিনি যদি অপরিচিত কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে প্রথমে থাকে সুন্দরভাবে আদাব জানান। নিজের পুরো নাম বলুন। কখনো সংক্ষিপ্ত নাম বলবেন না। এটা হচ্ছে যোগাযোগের শিষ্ঠাচার।

২. সবসময় Eye-Contact করুন। একজন স্মার্ট মানুষ সবসময় অপরপক্ষের চোখে চোখ রেখে কথা বলে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যারা চোখে চোখ রেখে কথা বলেন, তারা আত্মবিশ্বাসী। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেন না। আপনি লক্ষ করবেন, তারা আপনার সাথে কথা বলার সময় অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন। এর অর্থ দাঁড়ায়, তিনি/তারা হীনমন্যতায় ভুগতেছে। এর কারণে আপনি চাকরির ইন্টার্ভিউ থেকে বাদ পড়তে পারেন।

৩. যিনি আপনার সাথে কথা বলছেন, তাকে এটা বুঝিয়ে দিন যে, আপনি তার কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনছেন। সে কথা বলার সময় মাঝে মাঝে তার কিছু কথা রিপিট করে তার কথার প্রশংসা করুন। এতে সে বুঝবে আপনি তার কথা মনোযোগ সহকারে শুনছেন। জানেন তো! মানুষ তাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন, যে তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন।

৪. কথা বলার সময় ভুল করেও তর্কে জড়াবেন না। কেউ যদি আপনাকে অপমান করে কিছু বলে অথবা অযৌক্তিকভাবে কথাবার্তা বলে এর অর্থ দাঁড়ায়, তার ভেতর জ্ঞানের অভাব আছে। আমি জানি এ সময় নিজেকে কন্ট্রোল করা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। আচ্ছা একটিবার ভাবুন তো, তর্ক করলে কে জিতবে? আপনি নাকি যার সাথে তর্ক করছেন সে? যদি সে জিতে, আপনি হেরে যাবেন। আর যদি আপনি জিতেন, তাহলে আপনাদের সম্পর্ক হারিয়ে যাবে। তাই তর্কে জড়াবেন না।

৫. যোগাযোগের ক্ষেত্রে ৮০/২০ রুলস মেনে চলুন। ৮০ শতাংশ কথা শুনবেন এবং ২০ শতাংশ কথা বলবেন।  আপনার দুটো কান রয়েছে বেশি করে শোনার জন্য এবং একটা মুখ আছে কম কথা বলার জন্য। বুদ্ধিমান মানুষ সবসময় বেশি করে কথা শোনেন এবং যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই কথা বলেন।

৬. মানুষের প্রশংসা করুন। ভালো কিছু গুণাবলী তুলে ধরুন। যেমন- যার সঙ্গে কথা বলছেন তাকে বলতে পারেন, তোমার শার্ট অনেক সুন্দর। তোমার গত কালের ফেসবুক পোস্টটি অনেক ভালো লেগেছিল। তুমি অন্যদের থেকে অনেক স্মার্ট। আমি জানি কেউ আপনাকে নিয়ে প্রশংসা করলে মনের ভেতর থেকে আপনি তার প্রতি শ্রদ্ধা অনুভব করেন। ভেবে দেখেছেন, আপনি যদি একই থিওরি বাস্তবে প্রয়োগ করেন, তাহলে আপনিও কিন্তু মানুষের চোখে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবেন। তাই আজকে থেকে এই সিক্রেটটা মাথায় রাখবেন সবসময়। মানুষের প্রশংসা করুন।

৭. অন্য লোক আপনাকে নিয়ে কী ভাবছেন তা তাদের একান্ত ব্যাপার। তাদের ভাবতে দিন। আপনার এইসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে। বিল গেটসকে নিয়ে বিলকিস অনেক সমালোচনা করেছিল। আজকে বিল গেটসকে সারা দুনিয়া চেনে। কিন্তু বিলকিস কে, সেটা কেউ জানেন না। তাই মানুষের কথায় নিজেকে প্রভাবিত করা বন্ধ করে নিজের কাজে মনোযোগ দিন।

৮. সবসময় রুচিশীল পোশাক পরুন। চুলের যত্ন নিন। জুতার দিকে লক্ষ রাখবেন। নিজেকে সবসময় দুর্গন্ধমুক্ত রাখুন। ভালো ফেস ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।

৯. বিশ্বমানের এই যুগে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে কথা বলা জানতে হবে। নাহলে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে যাবেন। ইংরেজিতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সবসময় শুনুন। বেশি বেশি ইংলিশ মুভি দেখুন। আপনাকে কিছু বুঝতে হবে না। শুধু দেখতে থাকুন। বছর খানেক পর ইংরেজিতে নিজের দক্ষতা দেখে নিজেই অবাক হবেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।