সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন বাড়ানো হয়েছে।
পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ হবে ৫, ৬, ৭, ৮ সেপ্টেম্বর। এর আগে ২৩, ২৪ এবং আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল, তা আজ বুধবার (২৫ আগস্ট) শেষ হয়েছে।
কক্সবাজার জজ ও দায়রা আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল আগামী সেপ্টেম্বর মাসের ৫, ৬, ৭ ও ৮ তারিখ সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন।
বুধবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলাটির রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।
পিপি ফরিদুল আলম জানান, ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট টানা তিন দিন সাক্ষ্যগ্রহণের পর মামলার বাদী মেজর (অব.) সিনহার বড় বোন শারমিন শাহারিয়ার ফেরদৌস এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ২ নম্বর সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছে বিজ্ঞ আদালত। আশা করি খুব দ্রুত বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হবে।
এদিকে মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসকে দিয়েই সোমবার (২৩ আগস্ট) শুরু হয়েছিল বিচার কার্যক্রম। তার জবানবন্দির পর ১৫ আসামির আইনজীবীরা শারমিনকে জেরা করেন। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দিন মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিনের বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়।
অবশেষে তৃতীয় দিন সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এ নিয়ে মামলার ১ নম্বর ও ২ নম্বর আসামির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সাহেদুল ইসলাম সিফাত বলেন, ‘এটি একটি পরকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সেটি উপস্থাপনের মাধ্যমে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছি। এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার চাচ্ছি।’
সিনহার বড় বোন শারমিন শাহারিয়ার ফেরদৌস বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে এ হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ জেনে মামলা দায়ের করেছি। সে আলোকে দিয়েছি। অভিযোগপত্রের ১৫ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করছি।’
গত ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল মামলাটির চার্জ গঠন করেছেন।
ওই দিন বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে বাদীপক্ষের সাক্ষীগ্রহণের ধার্য দিন ২৬ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত টানা তিন দিন থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট ধার্য করা হয়। আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে তা শেষ হয়। কিন্তু এই তিন দিনে শুধুমাত্র দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ নেওয়া সম্ভব হয়েছে। তাই বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালত।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ‘ইউটিউব ভিডিও’ দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে পুলিশ। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের ৯ সদস্য। তারা হলেন— বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেবনাথ।
অপর আসামিরা হলেন— আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।