ক্যাম্পাস

নোবিপ্রবির ফিমস বিভাগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি: শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ফিসারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের (ফিমস) প্রভাষক পদে নিয়োগে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের যোগ্যতায় ফিসারিজের পাশাপাশি প্রাণিবিদ্যাকে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

গত ১৯ আগস্ট নিয়োগ এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর পরপরই বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।  

বিজ্ঞপ্তিতে প্রভাষক পদে নিয়োগে ফিসারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স ও প্রাণিবিদ্যা থেকে আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। এর আগে গত ২৬ জুন একই পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু মাত্র ফিসারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিষয়ের উপর ডিগ্রিধারীদের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থাকা সত্ত্বেও ফিসারিজ বিভাগে প্রাণিবিদ্যার সুযোগ রাখায় ক্ষোভ শিক্ষক -শিক্ষার্থীদের।

ফিমস বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রাণিবিদ্যা থেকে ফিসারিজের শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। এমনকি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ গ্র্যাজুয়েট বাদ দিয়ে নোবিপ্রবির ফিশারিজ গ্র্যাজুয়েটদের থেকে শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, ১৫-১৬ বছর ধরে এই ফিসারিজ বিভাগ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই সুদীর্ঘ সময়ে অনেক গ্র্যাজুয়েট তৈরি হয়েছে, যারা এই বিভাগের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখে।

ফিমস বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৪টি ডিপার্টমেন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগ তার একটি। এই বিভাগ থেকে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে বের হচ্ছেন। এই অবস্থায় যদি বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ‍্যা বিভাগ থেকে প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে। কেউ যদি কোনো বিশেষ সুবিধার জন‍্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে নিজেদের শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার করা হবে। আমি ব‍্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই ধরনের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু ফিসারিজ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ বলেন, প্রাণিবিদ্যাকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ফিসারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্সের সমমান দেওয়া কোনোভাবে উচিত নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিসারিজ বিভাগ রয়েছে। ফিসারিজ বিভাগ থেকে ডিগ্রি নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। পাশাপাশি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা আলাদা বিভাগ থাকা সত্ত্বেও ফিসারিজ বিভাগে প্রাণিবিদ্যাকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আহবান করা কাম্য নয়।

ফিমস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর সরকার দেশের বাইরে থাকায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাওয়ায় তিনি প্ল্যানিং কমিটির বৈঠক ডেকেছেন। কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে পুনরায় রিপোর্ট তৈরি করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, কোভিড আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ দিন যাবত অসুস্থ ছিলাম। তাই এই মুহূর্তে এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিষয়টি সম্পর্কে বলতে পারবে।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জসিম উদ্দিন বলেন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ এটি অপশন হিসেবে দেওয়া হয়েছে কেউ চাইলে আবদেন করতে পারবে। সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেই এটি তৈরি করা হয়েছে।

নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর জানান, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়গুলো বিভাগের চাহিদার উপর ভিত্তি করেই প্রকাশিত করা হয়। নিয়োগ যোগ্যতায় প্রাণিবিদ্যা সংযুক্ত করা, না করার বিষয়ে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি থেকে যদি কোনো সংশোধন আসে, তাহলে সেভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা আলাদা বিভাগ থাকা সত্ত্বেও ফিসারিজ বিভাগে কেনো প্রাণিবিদ্যার বিষয়টি সংযুক্ত করা হলো আমার জানা নেই। তবে, বিভাগের চাহিদার ভিত্তিতেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিভাগ যদি নিয়োগ যোগ্যতায় প্রাণিবিদ্যা সরিয়ে শুধু ফিসারিজ বিষয়টি রাখার জন্য প্ল্যানিং কমিটির বৈঠক অনুযায়ী রিপোর্ট জমা দেয়, তাহলে সেটিই বিবেচনা করা হবে।