স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে দল থেকে মনোনীত প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’দের বিরুদ্ধে এবার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্র বলছে, দলীয় প্রার্থীর বাইরে কেউ নির্বাচন করলে আজীবনের মতো দল থেকে বহিষ্কার হতে পারেন এবং কখনো নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন না।
নেতারা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। অনেকটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে সম্মান জানাতে বলা হলেও কার্যত তা কোনো কাজে আসেনি। যে কারণে কঠোর সিদ্ধান্ত ছাড়া উপায় থাকছে না।
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি তৃতীয় বৈঠক বসতে যাচ্ছে ৯ সেপ্টেম্বর। গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠক হবে। বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
স্থগিত থাকা প্রথম ধাপের ১৬৭ ইউনিয়ন পরিষদ ও ৯ পৌরসভার ভোট হবে ২০ সেপ্টেম্বর। করোনাভাইরাস সংক্রমণের উর্ধ্বগতির মধ্যে সবশেষে ২১ জুন প্রথম ধাপে ২০৪ ইউপির নির্বাচন হয়। ১৬৭ ইউপির নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়। এর মধ্যে রয়েছে-খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ১৬১ ইউপি, ৯টি পৌরসভা। এছাড়া প্রার্থী মারা যাওয়ায় ৫টি ইউপি ও সেন্টমার্টিন ইউপির ভোট পরে হবে। জানা গেছে, ৯ পৌরসভা ও ১১ ইউপিতে ইভিএম এ ভোট হবে।
এসব নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহীদের কাছে শনিবার থেকে আবেদনপত্র বিক্রি শুরু হয়েছে। চলবে বুধবার পর্যন্ত।
দলীয় মনোনয়নের বিপক্ষে গিয়ে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতির গ্রুপিং, সাংগঠনিক কোন্দল, দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়া, চেইন ইন কমান্ড ভেঙে পড়াকে কারণ হিসেবে মানছেন নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন কমিটি পুনর্গঠন না হওয়ায় উপজেলা, ইউনিয়নের মতো তৃণমূলে কোন্দল বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আবার নিজ এলাকায় নিজেদের প্রভাব বলয় ঠিক রাখতে এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা, এমপি, মন্ত্রী পর্যন্ত জড়িয়ে যাচ্ছেন।
প্রথম দফার বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা ছিলো অনেক বেশি। দ্বিতীয় ধাপেও পৌরসভা নির্বাচনে ৬০টি পৌরসভার মধ্যে ২১টিতেই ছিল আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে জয়লাভ এবং কিছুসংখ্যক পৌরসভায় জয়ের কাছাকাছি ছিলো তারা। এ নিয়ে কয়েকটি পৌরসভায় দলের অভ্যন্তরে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এতে নিহতও হয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিল প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মারামারিতে প্রাণ গেছে একজনের।
দলীয় সূত্র বলছে, স্থানীয় নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে সৃষ্ট কোন্দল নিরসনে এবার কঠোর পথে হাঁটছে দল। বারবার ক্ষমা করা হলেও বিদ্রোহী প্রার্থী কমছে না, উপরন্তু আরও বাড়ছে। আর নির্বাচনে ঘিরে প্রতিপক্ষের চেয়ে নিজেদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে বেশি। যে কারণে দলীয় ঐক্যও ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক রাইজিংবিডিকে বলেন, দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান। তিনি মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন। সেই মনোনয়নের বাইরে গিয়ে কেউ যদি নির্বাচন করে তার তো দল করারই কোনো অধিকার হারিয়ে ফেলে। পার্টির নিয়মশৃঙ্খলা এবং নেতৃত্বের প্রতি যাদের আস্থা থাকে না, তাদের দল থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় করে দেওয়া হবে।