সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হয়েছে আট লাখ কোটি ডলার। এ সময়ে নিহত হয়েছে ৯ লাখ মানুষ। বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি ও অর্থব্যয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের অর্জন কী?
৯/১১ এর ২০ বছর পূর্তিতে সেই প্রশ্ন তুলেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদরা।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াইয়ের অর্জন সম্পর্কে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক ও গণসম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক ক্যাথরিন লাতজ বলেন, ‘যুদ্ধটা ছিল দীর্ঘ, জটিল, ভয়াবহ ও ব্যর্থ।... এবং যুদ্ধ চলছে বিশ্বের ৮০টি দেশে।’
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির কস্টস অব ওয়ার প্রজেক্ট পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হয়েছে আট লাখ কোটি ডলার। এতে ৯/১১ পরবর্তী যুদ্ধের সমস্ত সরাসরি খরচের হিসাব অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশে চালানো অভিযানে প্রতিরক্ষা দপ্তরের ব্যয়; পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুদ্ধের ব্যয় এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ সংক্রান্ত খরচ - যার মধ্যে রয়েছে পেন্টাগনের ঘাঁটির বাজেট; যুদ্ধফেরতদের চিকিৎসা ও সেবা খরচ, হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ব্যয় এবং এই ব্যয়ের জন্য নেওয়া ঋণের সুদ।
প্রতিবেদনে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সোমালিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলে যুক্তরাষ্টের জড়িয়ে পড়া যুদ্ধের খরচ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার খরচ হয়েছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে, ২ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার খরচ হয়েছে ইরাক ও সিরিয়ায়, ৩৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে সোমালিয়ায় ও আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলে। ২০০১ সাল থেকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য খরচ হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গত ২০ বছরে নিহত হয়েছে আট লাখ ৯৭ হাজার থেকে ৯ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন সেনা, মিত্রবাহিনীর সেনা, বিরোধী যোদ্ধা, বেসামরিক নাগরিক, সাংবাদিক ও মানবিক সহায়তা কর্মী। এরা সবাই বোমা কিংবা গুলিতে নিহত হয়েছেন। কিন্তু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরোক্ষভাবে যারা মারা গেছেন-অসুস্থতা, বাস্তুচ্যুত, অনাহার ও সুপেয় পানির অভাবে, তাদেরকে এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।
কস্টস অব ওয়ার প্রজেক্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিতা ক্রফোর্ড বলেন, ‘যুদ্ধ যে সংখ্যক মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে আমাদের প্রাপ্ত মৃতের সংখ্যা বাস্তব সংখ্যার চেয়ে কম। ৯/১১ এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বহু যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান যে বিস্তৃত ও নানাবিধ পরিণতি ডেকে এনেছে তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা জটিল, তাই আমরা থেমে গেছি এবং প্রাণহানির ওপর আলোকপাত করেছি।’