গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও বর্তমান বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে।
অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহানের সাবেক গৃহকর্মী এই অভিযোগ করেন।
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিনভর চেষ্টার পরও ওই গৃহকর্মীর অভিযোগপত্র গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রে ওই গৃহকর্মী বলেন, ‘আমি শাহজাহান স্যারের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতাম। কাজ করার সময় স্ত্রী বাসায় না থাকলে স্যার বিভিন্ন অজুহাতে শারীরিকভাবে আমার ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতেন। খারাপ উদ্দেশ্য প্রকাশ করতেন এবং আর্থিক প্রলোভন দেখাতেন। আমি নানান কৌশলে তার খারাপ উদ্দেশ্য থেকে বাঁচার চেষ্টা করতাম।’
ওই গৃহকর্মী বলেন, ‘বাসা খালি থাকায় কখনো কখনো তা পেরে উঠিনি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এরকম শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। একই সঙ্গে ভয়-ভীতি প্রদর্শনের ফলে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকি। ’
অভিযোগকারী আরো বলেন, ‘পরবর্তীতে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে উক্ত ঘটনাসমূহ খুলে বলি এবং বিচার চাই। কিন্তু তখন প্রত্যেক শিক্ষক আমাকে জানান আপনি যার কাছে বিচার চাইবেন তিনিই তো অপরাধী। পরবর্তীতে স্থায়ী ভিসি স্যার আসলে করোনার বন্ধে আমি তার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। আমি আশাবাদী আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির সুষ্ঠু বিচার তার কাছে পাবো।’
থানায় বা আদালতে অভিযোগ না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট কেন অভিযোগ করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই তিনি বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ, আদালতে গেলে অনেক টাকা লাগতে পারে। তাই আমি উপাচার্য স্যারের নিকট বিচার চাইছি।’
এদিকে উক্ত গৃহকর্মী উপাচার্য বরাবর যৌন হয়রানির অভিযোগ দায়ের করার চেষ্ঠা করলেও অভিযোগপত্র গ্রহণ করেননি উপাচার্য প্রফেসর ড. একিউএম মাহবুব। পরবর্তীতে অভিযোগকারী অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে জমা দিতে চাইলে তারাও অভিযোগটি গ্রহণ করেনি।
এ বিষয়ে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের প্রধান মানসুরা খানম বলেন, ‘অভিযোগকারীর বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কেউ নন। যে কারনে অভিযোগটি বিধিসম্মত না হওয়ায় তার অভিযোগটি গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।’
অভিযোগ গ্রহণ না করার বিষয়ে উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, ‘ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ঘটেনি এবং ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নয়। তাই তার অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়নি। কারণ এ ঘটনার বিচার করার এখতিয়ার আমার নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ঘটনায় বিচারপ্রাপ্তির জন্য ভুক্তভোগীকে প্রচলিত আইনের আশ্রয় নিতে হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও বর্তমান বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড: মো: শাহজাহান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সাবেক উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন পদত্যাগ করার পর আমাকে ভারপ্রাপ্ত (রুটিন দায়িত্ব) উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর থেকেই সাবেক উপাচার্যের অনুসারীরা বিভিন্ন সময় আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে আসছেন। এটাও তারই অংশ। মূলত আমাকে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেয় করার জন্য এ ধরনের মিথ্যা ও ন্যাক্কারজনক অভিযোগ করা হচ্ছে। তবে যথাযথ তদন্ত হলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। ’
গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা নতুন কিছু নয়। ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে এক নারীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের ভিডিও ভাইরাল হয়।
এর আগে ২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন একই বিভাগে এক ছাত্রী। এছাড়া ২০১৯ কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান মো. আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে ওই বিভাগের দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে।