স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য নজরুল সংগীতশিল্পী শবনম মুশতারী। চিকিৎসকের পরামর্শে বর্তমানে বাসায় রেখেই তার চিকিৎসা চলছে।
শবনম মুশতারী ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন। দুই বছর আগে তার এই রোগ ধরা পড়ে। এসব তথ্য জানিয়ে শবনম মুশতারীর ছোট বোন ইয়াসমীন মুশতারী বলেন—‘শবনম মুশতারী স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন। কাউকে চেনেন না, কথায় অসংলগ্নতা রয়েছে। তবে কাউকে না চিনলেও তা বুঝতে দেন না।’
গত বছর জন্মদিনে বোনেরা মিলে বাইরে খাওয়া-দাওয়া করেন শবনম মুশতারী। বাসায় ফেরার পর তার স্ট্রোক করে। দুই বছর তার ভুলে যাওয়ার ব্যাপারটা ছিল, কিন্তু এক বছর ধরে কাউকে চিনতে পারছেন না। নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিন মাস আগে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয় এই শিল্পীর। আপাতত বাসায় নার্স রেখে তার চিকিৎসা চলছে। তবে খাওয়াদাওয়া স্বাভাবিক আছে।
শবনম মুশতারী অনেক দিন ধরে অসুস্থ কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কেউ তার খোঁজ নেননি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন ইয়াসমীন মুশতারী। তিনি বলেন, ‘আমরা কারো সহযোগিতা চাইনি। অসুস্থতার খবর কেউ জানুক তা–ও চাইনি। কিন্তু জন্মদিনে আপার বান্ধবী কিছু ছবি তোলেন, যা হয়তো ফেসবুকে ছড়িয়েছে। তার আগে কি উচিত ছিল না, শিল্পীর একটু খবর নেওয়া? এই করোনায়ও তো কত শিল্পী মারা গেলেন, তা–ও কি আমাদের বোধোদয় হবে না! পয়সাপাতির জন্য না, হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছি কি না, খবর নিয়ে সুব্যবস্থা করা। সরকারের পক্ষ থেকে এটুকু কি আশা করতে পারি না?’
জীবন্ত কিংবদন্তি শিল্পীদের খোঁজ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইয়াসমীন মুশতারী বলেন, ‘সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা আছে, তাদের তো একবার হলেও জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের খবরটা নেওয়া উচিত। বিনয়ের সঙ্গে বলছি, কিংবদন্তি যারা বেঁচে আছেন, তাদের একটু হলেও খোঁজ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো অনেক দরদি মানুষ, কিন্তু সব খবর তো আর তার কান পর্যন্ত পৌঁছায় না!’
নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন শবনম মুশতারী। তার বাবা কবি তালিম হোসেন আর মা মাফরুহা চৌধুরী ছিলেন দৈনিক বাংলা পত্রিকার মহিলাবিষয়ক পাতার সম্পাদক, কথাসাহিত্যিক। শবনম মুশতারীর এক ছেলে, এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে পাইলট ও মেয়ে বিয়ে করে সংসারী। শবনম মুশতারীর দুই ভাই শাহরিয়ার চৌধুরী ডেটা অ্যানালিস্ট ও হাসনাইন চৌধুরী বিমানের ক্যাপ্টেন।
ষাটের দশকে সংগীতজীবন শুরু করেন শবনম। আধুনিক ও নজরুলসংগীতের তার ১০টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—‘লাইলী তোমার এসেছে ফিরিয়া’, ‘বেস্ট অব শবনম মুশতারী’, ‘প্রিয় কবির প্রিয় গান’, ‘প্রিয় এমন রাত’ প্রভৃতি।