খেলাধুলা

আইসিসি একাডেমি: এক পাত্রে ক্রিকেটের সব উপাদান 

ট্যাক্সি নিয়ে ঢুকতেই দেখা মিলবে সারি-সারি বিল্ডিং, দুবাইয়ে যা অনুমিতই। আলাদা যেসব জিনিসের দেখা মিলবে এখানে, তা হলো বিশাল বিশাল স্টেডিয়াম আর মাঠ। এতেই নিশ্চিত হলাম, না ঠিক জায়গায় এসেছি- দুবাই স্পোর্টস সিটি। সাজানো গোছানো ক্রীড়া জগতের আধুনিক এক আঁতুড়ঘর। ২০০৪ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়, উদ্বোধন হয় ২০০৮ সালে।

ক্রিকেটের জন্যই এখানে আসা। স্পোর্টস সিটির অন্দরে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে হচ্ছে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের খেলা। সেই সুবাদে স্পোর্টস সিটির অন্দরে এক বিকালে ঘুরতে যাওয়া। ভেতরে প্রবেশের পর অবাক হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। কী কী আছে স্পোর্টস সিটিতে, এই প্রশ্ন না করে জিজ্ঞাসা করতে হবে কী নেই এখানে?

আসলেই তো কী নেই এখানে? ফুটবল থেকে ক্রিকেট, রাগবি হতে শুরু করে গলফ সবকিছুই হাতের মুঠোয়। থাকার জন্য আধুনিক আবাসন, খাওয়ার জন্য আছে রেস্টুরেন্ট। এখানে বসবাস প্রায় ৭০ হাজার মানুষের। পড়াশোনার জন্য রয়েছে ৯টি আধুনিক স্কুল। অনুষ্ঠান-পার্টি কিংবা পিকনিক সবকিছুর ব্যবস্থা আছে এই স্পোর্টস সিটির ভেতরে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে প্রয়োজন গাড়ি, হেঁটে যাওয়ার উপায় থাকলেও অসাধ্য সাধন করতে হবে। যেন কূল-কিনারা কিছুই নেই। নতুন কারো জন্য তো আরো কঠিন।

আজ দ্বিতীয় পর্বে দুবাই স্পোর্টস সিটির অন্দরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) একাডেমির কথা তুলে ধরা হলো রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য-

আইসিসি একাডেমি: বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইসিসির সদর দপ্তরের পাশে অবস্থিত আইসিসি একাডেমি। সামনেই ফুলের বাগান, বিল্ডিং সংলগ্ন লাগোয়া ভবনে বিশাল ইনডোর। যেন সাজানো গোছানো পরিপাটি ক্রিকেটের সংসার। আধুনিক ক্রিকেটের সব ব্যবস্থাই এখানে রেখেছে সংস্থাটি। একাডেমির প্রবেশ পথ বরাবর ওপরে বিশাল অক্ষরে লেখা, ‘ওয়েলকাম টু দ্য হোম অব এলিট ক্রিকেট।‘

কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশের পর দেখা মেলে রিসিপশনিস্টের। ডানে তাকালেই মনে হবে কোনো স্পোর্টস শপে আসা। সামনেই যে বসা স্পোর্টস শপের বিক্রেতা। আর এই শপে আছে ক্রিকেট ব্যাট-বল হতে শুরু করে জার্সি, গ্লাভসসহ নানা সামগ্রী। অর্থাৎ ক্রিকেটের সবকিছুই পাওয়া যাবে এখানে। আর বাঁয়ে তাকালেই ক্যাফেটারিয়া। ক্রিকেট সামগ্রী কিংবা খাবার; দুটোর মূল্যই চড়া।

এই শপে আকৃষ্ট করে একটি স্যুভেনির ক্রিকেট ব্যাট। ২০০৯ সালের ২২ এপ্রিল দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি হওয়া পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের স্বাক্ষর রয়েছে এই ব্যাটে।

এর একটু সামনেই আছে আধুনিক সরঞ্জাম সম্বলিত বিশাল জিম। ভেতরে বেশ কয়েকজনকে জিম করতেও দেখা গেছে। বাঁয়ে হাঁটলে দেখা মেলে বিশাল ইনডোরের, যাকে ক্রিকেটের অত্যাধুনিক ইনডোর বললেও ভুল হবে না। অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের সিমিং কন্ডিশন কিংবা উপমহাদেশের স্পিন স্বর্গ, সবই আছে এখানে থাকা সাতটি ভিন্ন আচরণের পিচে। ইনডোরে পুরো অনুশীলন রেকর্ডিংয়ের জন্য আছে ক্যামেরা।

একাডেমিতে ফ্লাডলাইট সুবিধাসহ দুটি মাঠ রয়েছে। যেকোনো ধরনের টুর্নামেন্ট অনায়াসে এই মাঠগুলোতে আয়োজন সম্ভব। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও একসঙ্গে বাংলাদেশ-পাকিস্তান অনুশীলন সেরেছিল এখানে, পিচ রয়েছে মোট ৩৮টি। তার মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কন্ডিশন অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে ২৮ পিচ। এই মাঠগুলো ক্যাম্পের জন্য ভাড়াও নিতে পারে যে কোনো দেশ কিংবা দল।

তিনটি বিষয় নিয়ে মূলত কাজ করে এই একাডেমি। প্রথমটি হলো হাইপারফরম্যান্স দল কিংবা ক্রিকেটারদের হাইপারফরম্যান্স সুযোগ-সুবিধা, কোচিং, ক্রীড়া বিজ্ঞান ও বিশ্লেষণসহ অনুশীলন করানো। দ্বিতীয়টি হলো ক্রিকেট ডেভলপমেন্ট, আরব আমিরাতসহ বিশ্বের যে কোনো দেশ কিংবা ক্রিকেটারদের ক্রিকেট উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম, ইভেন্ট, লিগ, টুর্নামেন্টসহ কোচিং প্রোগ্রামের আয়োজন করানো। আর তৃতীয়টি হলো শিক্ষা, বিভিন্ন ক্রিকেট কোচ কিংবা প্রশাসকদের শূন্য হতে উচ্চপর্যায়ের ক্রিকেটীয় শিক্ষাদানে সহযোগিতা করা।

ক্রিকেটার-কোচ হতে শুরু করে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট যে কেউ, এখান থেকে নিজেকে নিয়ে যেতে পারেন উচ্চ শিখরে। দিনে কিংবা রাতে মাঠে কিংবা ইনডোরে এখানে সবধরনের কন্ডিশনে ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ-সুবিধা। এক কথায় আইসিসি একাডেমি যেন এক পাত্রে ক্রিকেটের সব উপাদান।