খেলাধুলা

বাবরদের একচ্ছত্র রাজত্ব নাকি ফিঞ্চদের আধিপত্য

ম্যাথু হেইডেন ব্যাটসম্যানদের নিয়ে নেটে ব্যস্ত। হাসান আলী-শাহিন শাহ আফ্রিদি মাঠের পাশে খুনসুঁটিতে মেতেছেন। একটু পর পুরো দলই একসঙ্গে হয়ে গেল। হাসি-ঠাট্টা আর খুনসুঁটিতে মেতে আছেন সকলে। দলের অন্যতম দুই সদস্য শোয়েব মালিক আর মোহাম্মদ রিজওয়ানের জ্বর বোঝার উপায় নেই পুরো দলের সুর দেখে। আইসিসি একাডেমি মাঠে সেমিফাইনালের আগে শেষ প্রস্তুতিতে এমনই ফুরফুরে মেজাজে দেখা গিয়েছে পাকিস্তানকে। আজ বৃহস্পতিবার রাতে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া।

ফুরফুরে থাকারই কথা পাকিস্তানের। প্রথম ম্যাচ থেকে যে দলটি খেলে এসেছে কার্যত একচেটিয়া রাজত্ব করে। না ভারত, না নিউ জিল্যান্ড- সামনে যেই এসেছে তাকেই ছোবল মেরেছে। সুপার টুয়েলভের গল্প শেষ। এবার শেষ চারের লড়াই। মঞ্চ এক প্রেক্ষাপট ভিন্ন। হারলেই দেশের বিমান, আর জিতলেই ফাইনালের টিকিট। সেটা যেমন জানে বাবর আজমের দল, তেমনি অ্যারন ফিঞ্চ বিগ্রেডও। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নামবে দল দুটি।

টুর্নামেন্টে একমাত্র দল হিসেবে সুপার টুয়েলভের ৫ ম্যাচ খেলে ৫ ম্যাচেই জিতেছে পাকিস্তান। প্রথম ম্যাচে ভারতকে হারানোর পর কোনো ম্যাচেই একাদশে পরিবর্তন নিয়ে আসেনি। পুরো দলীয় পারফরম্যান্সে যেন উড়ছে দলটি। ৫ ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছেন ৫ জন। অবাক করা বিষয় হলো এই ৫ ম্যাচেই পাকিস্তান মাঠে নেমেছে একই একাদশ নিয়ে।

তবে সেমিতে না চাইলেও পাকিস্তানকে একাদশে পরিবর্তন আনতে হতে পারে। দলের অন্যতম দুই ক্রিকেটার শোয়েব-রিজওয়ান জ্বরে আক্রান্ত। তবে কোভিড-১৯ নেগেটিভ আপাতত এটিই স্বস্তির। শেষ প্রস্তুতিতে তাদের পায়নি পাকিস্তান। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের জন্য অপেক্ষা করবে দল। এ দুজন না খেললে একাদশে আসতে পারেন সরফরাজ আহমেদ ও হায়দার আলী।

অন্যদিকে সুপার টুয়েলভের ৫ ম্যাচের মধ্যে ৪ ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। তবে এক্ষেত্রে ভাগ্যও কাজ করেছে কিছুটা। গ্রুপ ওয়ানে তৃতীয় হওয়া দল দক্ষিণ আফ্রিকাও চার ম্যাচ জিতেছে, তাদের পয়েন্ট ছিল ৮। কিন্তু রান রেটে এগিয়ে থেকে শেষ চারের টিকিট পায় অ্যারন ফিঞ্চের দল।

এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২৩টি ম্যাচে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া। তার মধ্যে জয়ের পাল্লা ভারি পাকিস্তানের। তারা জিতেছে ১৩টি ম্যাচে আর অস্ট্রেলিয়া ৯টিতে। ১টি ম্যাচের ফল হয়নি। আর বিশ্বকাপের মঞ্চে ৬ বারের দেখায় প্রত্যেকে জিতেছে ৩টি করে ম্যাচ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পাকিস্তান ফাইনাল খেলেছে ২ বার, তার মধ্যে ২০০৯ সালের মুকুট তাদের দখলে। এবার যদি হয় তাহলে তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠবে তারা। আর অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে উঠেছে একমাত্র ২০১২ সালে।

পাকিস্তান ফর্মে থাকলেও অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ছেড়ে কথা বলছেন না। সেমিফাইনালের আগে তিনি জানিয়েছেন মাঠেই প্রমাণ হবে, ‘পাকিস্তান এখন খুব ভাল ফর্মে। ব্রিলিয়ান্ট ক্রিকেট খেলছে। পাওয়ার প্লেতে বল ও ব্যাটে তারা যেভাবে খেলছে এটাই তাদের সফল্যের কারণ। এদিকে গত কয়েক সিরিজে যদি তাকান তবে আমাদের পারফরম্যান্স দেখে হয়তো আমাদের এই সেমিতে হারিয়েই দিয়েছেন অনেকে। এতে আমাদের সমস্যা নেই। যে কেউ যে কোন কিছু ভাবতে পারে। আমরা মাঠেই নিজেদের প্রমাণ করবো।’

অন্যদিকে পাকিস্তানের ব্যাটিং পরামর্শক ম্যাথু হেইডেনের মতে পাকিস্তান সফল হবে, ‘এটা ঠিক যে আমি খুব অল্প সময় এই দলটার সঙ্গে আছি। এর মানে আমাকে খুব দ্রুত ওদের হৃদয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এতে আমি সফল। আর পাকিস্তান এমনিতেই প্রতিভাবান ক্রিকেটে ভরপুর। তো আমাকে খুব একটা পরিশ্রমও করতে হয়নি এবং আমরা গ্রুপ হিসেবে কতটা এক হতে পেরেছি তা আপনারা ভারত ম্যাচে দেখেছেন। ওই ম্যাচই আমাদের জোর ধাক্কা দিয়েছে। আমি দেখছি ক্রিকেটারদের মধ্যে ওই ম্যাচ জয়ের পর শিরোপার ক্ষুধা বেড়েছে। এখন সামনে অস্ট্রেলিয়ার মতো পাঁড় পেশাদার দল আছে, এটা সত্যিই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমি আশাবাদী যেভাবে আমরা এগিয়েছি তার ধারাবাহিকতাতে অবশ্যই আমরা সফল হবো।’

দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত এই মাঠে বিশ্বকাপের ১১টি ম্যাচ হয়েছে। তাতে ১০টি ম্যাচই পরে ব্যাটিং করা দল জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। একমাত্র নিউ জিল্যান্ড-স্কটল্যান্ড ম্যাচে আগে ব্যাটিং করা দল ম্যাচ জিতেছে। আজও দেখা যেতে পারে স্পোর্টিং উইকেট, হতে পারে রান উৎসবও।

দুবাই স্টেডিয়ামে ভারতকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর যেন বাবর আজমদের একচেটিয়া রাজত্ব চলছে। সেই রাজত্বে এবার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাক রাজত্ব থাকবে নাকি আধিপত্য শুরু হবে অস্ট্রেলিয়ার সেটি বোঝা যাবে রাতেই।