ক্যাম্পাস

অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির পুরো নম্বর চান যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা 

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) করোনা প্রতিরোধ ও সেশনজট দূরীকরণে গত ১৭ অক্টোবর ২০২০ থেকে সব বিভাগে অনলাইন ক্লাস চালু করে। সঙ্গে ক্লাসে উপস্থিতির জন্য ৮ নম্বর বরাদ্দ করা হয়। নেটওয়ার্ক ও ডিভাইস সমস্যার কথা চিন্তা করে যবিপ্রবি উপাচার্যের নির্দেশনা ছিল অনলাইনে নেওয়া প্রতিটি ক্লাসের রেকর্ডিং ভিডিওসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিজস্ব লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (এলএমএস) আপলোড করতে হবে। 

যেসব শিক্ষার্থী নেটওয়ার্ক সমস্যার জন্য ক্লাসে যুক্ত হতে পারবে না, তারা রেকর্ডিং ক্লাস পরে দেখে নিলে উপস্থিতির জন্য ৮ মার্ক পেয়ে যাবে। কিন্তু কথা থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষকই অনলাইনে আপলোড করেননি কোনো ক্লাসের ভিডিও। আবার উপস্থিতির ৮ মার্ক নির্ধারণ করছেন ক্লাসে উপস্থিতি-অনুপস্থিতি দেখে। এতে বিপাকে পড়েছেন নেটওয়ার্ক ও ডিভাইস সমস্যায় লোন ও ইন্টারনেট সুবিধা চেয়ে আবেদন করা যবিপ্রবির ৬৭০ জনসহ অনেক শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক সজীবুর রহমান।  

মো. নাজমুল হোসেন

করোনার এই মহাসংকটময় সময়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রামে ছিলেন। অনেকের কাছে ছিল না স্মার্ট ফোন, নেটওয়ার্কের গতি ও দুর্ভোগ সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত আছি। সেসময় অনেকেই সঠিকভাবে ক্লাস করতে পারেনি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়ায়, যেটা প্রশংসনীয়।  প্রশাসন সেসময় জানিয়েছিল যে, যারা এখন বিভিন্ন সমস্যার কারণে ক্লাস করতে পারছে না, তাদের জন্য পরবর্তী সময়ে ক্লাস ভিডিও এলএমএসে আপলোড করে দেওয়া হবে এবং সেই ভিডিও দেখলে ক্লাস উপস্থিতির নম্বর তারা পাবে। সামনে পরীক্ষা অথচ কোনো ভিডিও শিক্ষার্থীরা পায়নি। ক্লাসে উপস্থিতির মার্ক নিয়ে আছে এখনো অনিশ্চয়তা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের একমাত্র চাওয়া, যে প্রতিশ্রুতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয়েছিল, তা রক্ষা করুন এবং শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তি দূর করুন। 

এম এ জুবায়ের রনি

করোনাকালীন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট দূরীকরণে ভার্চুয়ালি ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তটা যৌক্তিক ও সময়োপযোগী হলেও পুরোপুরি কার্যকর নয় পদ্ধতিটা। যেখানে দেশের মফস্বল শহরে প্রায়ই নেটওয়ার্ক সমস্যা দেখা দেয়, সেখানে গ্রাম এলাকায় কথা বলার কোনো অবকাশ রাখে না। 

এদিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম করা হয়েছে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির ভিত্তিতে নম্বর প্রদানের। বিষয় হচ্ছে, যেখানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে ঢুকতেই পারে না নেটওয়ার্ক সমস্যায়, আবার অনেক সময় ক্লাস চলতে চলতে নেটওয়ার্ক চলে যায় (শিক্ষক-শিক্ষার্থী দুজনের ক্ষেত্রেই), সেখানে এই উপস্থিতির ভিত্তিতে যদি নম্বর প্রদান করা হয়, তাহলে রীতিমত অবিচার করা হবে। আমার মতামত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত হবে এ বিষয়টা আরেকটু গুরুত্ব সহকারে মানবিক বিচারে বিবেচনা করে উপস্থিতির ভিত্তিতে নম্বর প্রদানটা শিথিল করা। 

আফসানা জামান শিম্মী

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের নিকট কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এত দ্রুত সব বর্ষের ১ সেমিস্টারের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করে আমাদের সেশনজট থেকে পরিত্রাণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। তবে প্রসাশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নাম্বার প্রদানের ব্যাপারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দাবি, শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তির মধ্যে না ফেলে তাদের মানসিক ও সার্বিক অবস্থা অনুধাবন করে উপস্থিতিতে সব শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।   মো. লনি শিকদার

আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের নেটওয়ার্কের গতির কথা। আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর বাড়ি গ্রামে। করোনার সময় বাড়ি থেকে আমরা দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস শেষ করেছি কিন্তু দেখা গেছে কেউ খোলা মাঠে, কেউ বা বাড়ি ছেড়ে দূরে এসে ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্লাসে জয়েন হওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু গ্রামের দুর্বল নেটের কারণে তাও সম্ভব হয়নি। অনেকের উপযুক্ত ডিভাইস ছিল না। সর্বোপরি যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের কাছে সদয় প্রার্থনা শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যা বিবেচনা করে উপস্থিতির উপর যে নির্দিষ্ট নম্বর দেওয়া হয়, তা সম্পূর্ণ দেওয়ার অনুরোধ করছি।

মায়িশা ফারজানা মিথীলা

করোনা মহামারির সময়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজ নিজ বাড়িতে থেকে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিয়েছিল। অনেকের কাছে ছিল না ল্যাপটপ, এমনকি ভালো স্মার্ট ফোন। আর তাছাড়া নেটওয়ার্কের গতি ও দুর্ভোগ যেখানে শহর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদেরই হয়েছে, সেখানে গ্রাম এলাকার কথা বলার কোনো প্রয়োজন রাখে না। সামনে পরীক্ষা, অথচ এখনো অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসের ভিডিও কিংবা অডিও পায়নি। ক্লাসে উপস্থিতির নম্বর কিভাবে দেওয়া হবে, সেটা এখনো আমরা জানি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের একমাত্র চাওয়া, শিক্ষার্থীদের ক্লাস নোট (অডিও বা ভিডিও) এবং উপস্থিতির নম্বর সম্পর্ক এই যে ভোগান্তি, তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দূর করা।

আতাউর রহমান

আমরা করোনার এই মহামারির মধ্যে অনেকদিন পড়ালেখা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। যদিও এই অচলাবস্থা কাটানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু আমরা যারা গ্রামে ছিলাম, তাদের নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে সব ক্লাসে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্লাস রেকর্ডগুলো দেওয়ার কথা থাকলেও আমরা সব কোর্সের রেকর্ড পাইনি। পরীক্ষা সামনে থাকায় আমাদের  ক্লাস রেকর্ডগুলো প্রয়োজন। কারণ এর সাথে উপস্থিতির নম্বরও যুক্ত। 

আমার মতে এলএমএসে যেসব ক্লাসের রেকর্ড নেই, সেগুলোর রিভিউ ক্লাস নিলে আমরা উপকৃত হতাম। পাশাপাশি করোনার এই ভায়াবহ পরিস্থিতির কথা মানবিকভাবে বিবেচনা করে   উপস্থিতির ৮ নম্বর সবাইকে দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত হবে বলে আমি মনে করি।