অস্ট্রেলিয়ার অ্যালিসা হিলি এবং মিচেল স্টার্ক দুজনেই ক্রিকেটার। ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম দম্পতি হিসেবে বিরল নজির গড়লেন তারা। বিয়ের পরে তারাই প্রথম ক্রিকেট দম্পতি, যারা দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের নজির গড়লেন।
পেশাগত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সফল হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এমন উদাহরণ অনেক আছে। তবে একই মুহূর্তে এক পেশায় সাফল্য অর্জন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন অস্ট্রেলিয়ার গতি তারকা স্টার্ক এবং হিলি। স্টার্ক যেমন অস্ট্রেলিয়া দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ; তেমনই তার স্ত্রী হিলি অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
স্টার্ক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন উইকেটরক্ষক হিসেবে। পরে ফাস্ট বোলার বনে যান। আদর্শ মানতেন স্বয়ং ইয়ান হিলিকে। এই ইয়ান হিলির ভাতিজি হিলির সঙ্গে পরিচয় হয় কিশোর বয়সে। হিলি তখন ফাস্ট বোলার হতে চাইতেন। পরে অবশ্য উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান বনে যান। একেই বলে নিয়তি! উইকেটরক্ষক হিসেবে কিশোরে ক্যারিয়ার শুরু করা স্টার্ক আজ ফাস্ট বোলার। আর ফাস্ট বোলার হতে চাওয়া হিলি আজকে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন অস্ট্রেলিয়ার পুরুষ ও নারী দলের দুই ক্রিকেটার স্টার্ক ও হিলি। ক্রিকেট দিয়েই তাদের পরিচয় এবং প্রেমপর্বের শুরু। মাত্র ৯ বছর বয়সে এক ক্রিকেট ম্যাচে আলাপ হয়েছিল দুজনের। এরপর জেলা ক্রিকেটের জন্য দুই ক্রিকেটারই একসঙ্গে খেলেছেন। খেলতে খেলতেই কখন যে দুজনে একে অপরকে মন দিয়েছিলেন, বুঝতেই পারেননি। অতঃপর বিয়ে।
স্টার্ক ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেন, সেবার আসরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন। অন্যদিকে, হিলি মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছেন পাঁচবার। এর মধ্যে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ রান করে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান। এরপর ২০২০ সালে তিনি ছিলেন ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়।
হিলি-স্টার্কের মতো দেশের হয়ে টেস্ট খেলেছেন এরকম আর মাত্র দুটি জুটি আছে। তারা হলেন ইংল্যান্ডের রজার প্রিডক্স ও রুথ ওয়েস্টব্রুক এবং শ্রীলঙ্কার গাই ডি অ্যালিস ও রাসাঞ্জলি ডি সিলভা। তবে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিততে পেরেছেন কেবল হিলি-স্টার্ক জুটিই।
দুজনে গুণে গুণে জিতেছেন আটটি বিশ্বকাপের শিরোপা। অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেট দলটা তাদের পুরুষ দলের চেয়েও অজেয়। হিলি তার স্বামীর চেয়ে বিশ্বকাপ জয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়েই আছেন। তিনি জিতেছেন ছয়টি বিশ্বকাপ আর স্টার্ক জিতেছেন দুটি বিশ্বকাপ।
হিলি অস্ট্রেলিয়া নারী দলের হয়ে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করেন। আর ২০১৩ সালে জিতেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। আর ২০১৫ সালে এসে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার পুরুষ দল নিজেদের ইতিহাসে পঞ্চমবারের মত ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে। সেই সুবাদে স্টার্ক জিতেন নিজের প্রথম বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপ জয়ে তিনি রাখেন বড় অবদানও।
তবে টি-টোয়েন্টির ভাগ্যটা যেনো কোনোভাবেই খুলছিল না অস্ট্রেলিয়ার। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপেও ঠিক ফেভারিট ছিল না অস্ট্রেলিয়া দল। কারণ বিশ্বকাপের আগেই টানা পাঁচটি টি-টোয়েন্টি সিরিজে তারা হারে।
কিন্তু সব পরিসংখ্যানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডের পাঁচটি বিশ্বকাপ ও দুটি আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফিতে নাম খচিত হলো অস্ট্রেলিয়া পুরুষ ক্রিকেট দলের। তবে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র দম্পতি এখন হিলি-স্টার্ক।