বিশ্বব্যাপী এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। ২০১৯ সালে চীনের উহান শহর থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৫২ লাখ ১১ হাজারের বেশি মানুষ। এরই মধ্যে এই ভাইরাসের নানা ধরণও দেখা দিয়েছে। যার মধ্যে ডেল্টাকে সবচেয়ে মারাত্মক ধরণ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসের আরো একটি নতুন ধরন। বিজ্ঞানীরা এটির নাম দিয়েছেন ‘ওমিক্রন’। যা ইতিমধ্যে উদ্বেগে ছড়াতে শুরু করেছে।
বিবিসির এক খবরে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যায়িত করার পর সতর্কতা হিসেবে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে দেশগুলো।
করোনার এই নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ নিয়ে শনিবার (২৭ নভেম্বর) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে কথা বলেছেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. সাকলায়েন রাসেল। তিনি ভাইরাসের এ ধরন সম্পর্কে করনীয়, প্রতিকার এবং সারা বিশ্বের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। আমাদের পাঠকদের জন্য তার বলা কথাগুলো তুলে ধরা হলো।
ডা. সাকলায়েন বলেন, কোভিড -১৯ এর অনেকগুলো ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) আছে। যেগুলো প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে যেগুলো সমস্যা সৃষ্টির কারণ বলে মনে হয় সেগুলোকে ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। আর যেসব ধরন থেকে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সৃষ্টি হয় বিজ্ঞানীরা সেই ধরণগুলোর নাম দিয়েছেন ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন। আর তেমনই একটি ধরন ছিল ‘ডেল্টা।’ সম্প্রতি শনাক্ত হওয়া ‘ওমিক্রন’ নিয়ে সবার মধ্যে যে ধারনা হয়েছে তাতে ধরেই নেওয়া হচ্ছে যে, এটির ছড়িয়ে পড়ার প্রবনতা করোনার অন্য ধরণ থেকে একটু বেশি। এর মাধ্যমে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।
করোনার এই ধরনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কতোটুক কার্যকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো গবেষণা করার তেমন একটা সুযোগ পাননি। সামনে দিন যতো যাবে বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে নতুন তথ্য দিতে পারবেন।
ডা. সাকলায়েন নিজের কাছে থাকা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও গবেষণাপত্রে প্রকাশিত তথ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই বিষয়ে বিজ্ঞানীদের কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। ভ্যাকসিন এই ধরন প্রতিরোধে কতটুকু সফল তা জানাতেও বিজ্ঞানীদের একই সময় প্রয়োজন। তবে একটি ডাটা থেকে তারা নিশ্চিত যে যুক্তরাজ্যে যাদের শরীরে ‘ওমিক্রন’ শনাক্ত হয়েছে তারা ইতিমধ্যে ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য ‘জসসন অ্যান্ড জনসন, ফাইজার, বায়োটেক, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার’ ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
এছাড়া ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে হংকংয়ে আসা ব্যক্তি অনেক আগেই ফাইজারের টিকা নিয়েছিলেন। আর এ থেকেই বিজ্ঞানীদের ধারণা টিকা নেওয়া সত্ত্বেও ‘ওমিক্রিন’-এ বেশি সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হতে পারেন।
বর্তমান বিশ্বের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেন, ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক দেশই দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফ্রিকা অঞ্চলের অনেক দেশের সঙ্গেই নিজেদের বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশ সরকারও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে বলে ধারণা করচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন’ নিয়ে বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তেমন কিছু বলার সুযোগ নেই। তবে কিছুদিন আগে করোনা রোগীর সংখ্যা আমাদের হাসপাতালগুলোতে কমে গেলেও এখন তা কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে।
ভয় না পেয়ে সবাইকে নিরাপদে এবং মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে ডা. সাকলায়েন বলেন, দেশ চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেকটাই অগ্রগতি অর্জন করেছে। আমরা সহজেই অনেক জটিল রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। তারপরও সবাইকে শারীরকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। ব্যায়ম করে শরীরকে ফিট রাখতে হবে।