‘ছাত্রলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। সেই সংগঠনের কর্মীরা আবরারকে হত্যা করতে পারে না। বহিরাগতরা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা করার জন্য দেশে এ ঘটনাটা ঘটিয়েছে। অন্য গোষ্ঠীর দায় ছাত্রলীগের ওপর চাপানো হয়েছে।’
রোববার (২৮ নভেম্বর) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে আবরার হত্যা মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য ধার্য ছিল। রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত তা পিছিয়ে আগামী ৮ ডিসেম্বর ধার্য করেছেন। এরপর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ।
তিনি বলেন, ‘এটা একটা চাঞ্চল্যকর মামলা। মামলার ভিকটিম ছাত্র আবার আসামিরাও ছাত্র। আমরা আদালতের কাছে উপস্থাপন করেছিলাম, এ মামলার তদেন্ত এসেছে আসামিরা বড় ভাইদের নির্দেশে এ কাজটা করেছে। কিন্তু বড় ভাই কারা ছিল তাদের এ মামলার চার্জশিটে অন্তুর্ভুক্ত করতে পারেনি। অর্থাৎ এ ঘটনার মাস্টার মাইন্ড কারা ছিল সেটা এখানে আসেনি।’
বুয়েটের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘রাত ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ দীর্ঘ সময়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষ কিছুই করতে পারেনি। প্রক্টর থেকে শুরু করে নিরাপত্তাকর্মীরা বলছিলেন তারা ঘুমোয় ছিলেন। এত বড় একটা দায়িত্ব নিয়ে, হাজার হাজার ছাত্রদের নিরাপত্তার বিষয়ে সেখানে সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে অনেক সিসি ক্যামেরা আছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, উনারা এখানে নিরাপত্তা দিতে পারেননি। কোনো কারণে বুয়েট কর্তৃপক্ষ যদি ঘটনাটা জানতে পারতো তাহলে কিন্তু এ দুর্ঘটনাটা ঘটতো না। নিরাপত্তা দেখে মনে করছি, উনাদের গাফিলতি আছে। ভিসিসহ বুয়েট কর্তৃপক্ষকে মামলায় আইনগতভাবে আনা উচিত ছিল। এটা আমরা আগুমেন্টে বলেছি। আশা করছি, এটা জাজমেন্টে আসবে।’
ছাত্রলীগকে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন উল্লেখ করে ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘সেই সংগঠন এ ধরনের কোনো কাজ করতেই পারে না। আমরা বলেছি, বহিরাগতরা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা করার জন্য দেশে এ ঘটনাটা ঘটিয়েছে। এ কারণেই ঘটনাকালীন সময়ের কোনো ভিডিও ফুটেজ আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে পারে নাই। আমরা আদালতে আবেদনও করি, ভিডিও ফুটেজটি আদালতে উপস্থাপন করার জন্য। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে এটা ডিলিট হয়ে গেছে। ঘটনার দিনেই কি ভিডিও ফুটেজ নষ্ট হয়ে যায়? ফুটেজগুলো আনা গেলে বহিরাগত কারা কারা ছিল, সেই বিষয়টা চলে আসতো। এ ঘটনাটা ছাত্রলীগ যারা তারা করেনি। তাদের জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের কারণে একটা চার্জশিট দেওয়া প্রয়োজন, পুলিশ আমাদের নিরীহ ছাত্রদের স্বীকারোক্তি আদায় করিয়ে চার্জশিট দিয়েছে। সব আসামিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তারা থানা, পুলিশ, কোর্ট বুঝেই না। তারা মেধাবী ছাত্র। আমি মনে করি, আমাদের দেশে মেধাশূন্য করার জন্য কোনো গোষ্ঠী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তার দায় ছাত্রলীগের ওপর চাপিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে যুক্তি আদালতে উপস্থাপন করেছি, আদালত তা রায়ে আনলে আমরা অবশ্যই খালাস পাবো।’
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে তৎকালীন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপদফতর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ, সদস্য মুনতাসির আল জেমি, সদস্য এহতেমামুল রাব্বি তানিম, সদস্য মুজাহিদুর রহমান আসামি। ঘটনার পর তাদের বহিষ্কার করা হয়।