ছাত্রলীগ নেতাদের মানসিক চাপে মৃত্যুবরণকারী খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তুলে আবেদন করেছে পুলিশ।
রোববার (৫ ডিসেম্বর) নগরীর খানজাহান আলী থানা পুলিশের পক্ষ থেকে খুলনার আদালতে এ আবেদন জানানো হয়। তবে, লাশ কুষ্টিয়াতে দাফন হওয়ায় আদালত এ আবেদন আমলে নেননি।
সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছিন।
তিনি জানান, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে সন্দেহ ও নানা গুঞ্জন সৃষ্টি হওয়ায় বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। সে অনুযায়ী গত শনিবার খানজাহান আলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। যেহেতু শিক্ষক সেলিম হোসেনের মৃত্যুর পর তার মরদেহ স্বাভাবিকভাবে দাফন করা হয়েছে। এরপর তার মৃত্যুকে ঘিরে মানুষের মধ্যে নানা গুঞ্জন ও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে রোববার পুলিশের পক্ষ থেকে কবর থেকে মরদেহ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হয়। কিন্তু আদালত আবেদনটি আমলে নেয়নি। তবে শিক্ষক সেলিমের মৃত্যুকে ঘিরে ব্যাপক রহস্য সৃষ্টি হওয়ায় বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আওতায় (নজরে) রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। যে কারণে আদালত মরদেহ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেননি। আদালত থেকে জানানো হয়, বিষয়টি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের এখতিয়ারভূক্ত। এজন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। মরদেহ যেহেতু কুষ্টিয়াতে দাফন করা হয়েছে তাই খুলনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনটি কুষ্টিয়ার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাবেন।
আরও পড়ুন: কুয়েট শিক্ষক সমিতি-ছাত্রলীগ মুখোমুখি, ক্যাম্পাস উত্তপ্ত
প্রসঙ্গত, ৩০ নভেম্বর বিকেল ৩টায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন (৩৮)। সম্প্রতি কুয়েটের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ফজলুল হক হলের বর্ডার কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার অনুগতদের ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার জন্য ড. সেলিমকে চাপ দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের জন্য ক্যাম্পাসের কাছে বাসায় যাওয়ার পর ২টায় তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন, তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের নতুন কমিটি
কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে কিছু সাধারণ ছাত্রের জেরা, অপমান, অবরুদ্ধ করে রাখা ও মানসিক নির্যাতনে তার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দুই দফা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষক সেলিমের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে দোষীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে ২ ডিসেম্বর দুপুরে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষকরা।
আরও পড়ুন: অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর তদন্ত দাবি
এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুয়েট বন্ধসহ বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর সাতটি আবাসিক হলে থাকা প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী হল ছাড়েন।
সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া পাঁচ সদস্যের নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।