খেলাধুলা

টেস্ট নাকি টি-টোয়েন্টি, গোলকধাঁধায় চূর্ণ বিচূর্ণ বাংলাদেশ

একই মঞ্চ, মাত্র ৬০ মিনিটের ব্যবধানে পাল্টে গেল দৃশ্যপট। ৩০০ রানে পাকিস্তানের ইনিংস ঘোষণা হলো। মেহেদী হাসান মিরাজের কাঁধে হাত রেখে সাকিব আল হাসান ড্রেসিংরুমের পথ ধরলেন। যার কাঁধে হাত রেখে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন সাকিব, তার ওপরই ক্ষুদ্ধ, রাগান্বিত, রুষ্ট।

সাজিদ খানের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বল মিস করে বোল্ড মিরাজ। নন স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়িয়ে সাকিব শূন্যে ব্যাট চালালেন তাতে মিশে ছিল ক্ষোভ, হতাশা, রাগ। এতটাই রেগে ছিলেন যে, মুখ আরেক দিকে ফিরিয়ে ক্ষোভ ঝারছিলেন। অবশ্য মিরাজ যে কাজ করেছেন সেই পথে সাকিব নিজেও পা বাঁড়িয়েছিলেন। সাজিদের থ্রো করা বলে অনেক আগেই আশা ছেঁড়ে দিয়েছিলেন। ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছেন।

শুধু মিরাজ বা সাকিব কেন! মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্তরা যেভাবে নিজেদের উইকেট আত্মাহুতি দিয়েছেন তাতে তাদের নিবেদন নিয়ে বিরাট প্রশ্ন উঠল। মিরপুরে টেস্ট খেলতে নেমেছেন নাকি টি-টোয়েন্টি, সেই গোলকধাঁধায় চূর্ণ বিচূর্ণ বাংলাদেশ। মাত্র ২৬ ওভারের খেলায় ৭ উইকেট হারিয়ে রান ৭৬। ফলোঅনের শঙ্কা কাটাতে স্বাগতিকদের আরো করতে হবে ২৫ রান। শুধু ফলোঅন কেন, বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্টটি এখন বাঁচানোর শঙ্কায় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বোলাররা যেভাবে দাপট দেখাচ্ছে তাতে তাদের পাল্লাই ভারি। 

বাংলাদেশের হতশ্রী ব্যাটিংয়ে শুরুটা ছিল অভিষিক্ত জয়কে দিয়ে। ব্যর্থ সাইফ হাসানের পরিবর্তে তাকে সুযোগ দেওয়া হয়। অথচ শুরুতেই হোঁচট। কী মনে করে স্পিনার সাজিদের বল ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এলেন। বড় শটের পরিবর্তে করলেন ফরোয়ার্ড ডিফেন্স। ব্যাটের কানায় লেগে বল বাবর আজমের হাতে। অভিষেকেই শূন্য, যে অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডে তার সঙ্গী আরো ২৩ জন।

সাদমান ধরে খেলতে পারেন। ধৈর্য ধরেন। কিন্তু সাজিদের শর্ট বল দেখে লোভ সামলাতে পারলেন না। একটু লাফিয়ে উঠা বলে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন মাত্র ৩ রানে। আবারো বাংলাদেশের দুই ওপেনার ব্যর্থ। মুমিনুল এসব পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে রান করে দলের মান বাঁচান। কিন্তু অধিনায়ক এবার যা করলেন তা মেনে নেওয়া কঠিন। বল পয়েন্টে পাঠিয়ে ভৌঁ দৌড় দিলেন। বল ও ফিল্ডারের দিকে নজর রেখে দৌড়াতে থাকেন। সেখানেই বিপদ ডেকে আনেন। ক্ষিপ্র হাসান আলী একহাতে বল নিয়ে করলেন থ্রো। সরাসরি স্টাম্প ভেঙে ১ রানে সাজঘরের পথ দেখালেন মুমিনুলকে।

চা-বিরতির পর ফিরে বাংলাদেশের খেলার মান একটুও বাড়েনি। উল্টো মুশফিক যেভাবে দলকে বিপদে ঠেলে বিদায় নেন তাতে স্রেফ মনে হচ্ছিল, হাসি-তামাশা চলছে মিরপুরের ২২ গজে। সঙ্গে শান্তর ডাউন দ্য উইকেটে এসে শট খেলার চেষ্টা এবং সুইপ করার অভিপ্রায় মনে করিয়ে দেয় কার আগে কে আউট হবে সেই প্রতিযোগিতা চলছে। মুশফিক সাজিদকে স্লপ সুইপ করতে গিয়ে ফাওয়াদের হাতে ক্যাচ দেন। সেই ক্যাচ নিয়ে ফাওয়াদও হতভম্ব। যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, এরকম শটও টেস্টে খেলা যায়! এরপর শান্তও সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে। রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু নওমানের ডেলিভারি নো বল হওয়ায় বেঁচে যান।

সেই বিপদ নিজের ওপরে ডেকে আনেন লিটন। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এবার ডাউন দ্য উইকেটে এসে ফিরতি ক্যাচ দেন। সাজিদের পোয়াবারো। এভাবেও উইকেট পাওয়া যায়। তার ধারাবাহিক বোলিংয়ের পঞ্চম শিকার সেই শান্ত। একটু ভেতরে ঢোকানো বলে শান্ত ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ। এর আগেই অবশ্য সাকিব বেঁচে যান নিশ্চিত রান আউটের থেকে। আর মিরাজ সাজিদের ষষ্ঠ শিকার হয়ে দিনটা পাকিস্তানের করে দেন।

ঝুঁকি নিয়ে সাকিব উইকেটের চারপাশে শট খেলে রান তোলার তাড়া দেখিয়েছেন। ৩২ বলে ৩ বাউন্ডারিতে করেছেন ২৩ রান। সঙ্গী তাইজুলকে নিয়ে ফলোঅনের লজ্জা এড়াতে পারেন কি না দেখার। 

দুই দিন বৃষ্টির পর মঙ্গলবার প্রথম উইকেটের কভার তোলা হয়। উইকেটের আচরণ কেমন হবে তা নিয়ে ছিল উৎকণ্ঠা। সচরাচর মিরপুরের তৃতীয় ও চতুর্থ দিন থেকে উইকেট ধীর হতে থাকে। স্পিনাররা সেই সুবিধা আদায় করে নেন। তবে আজকের সকালে বাংলাদেশের দুই পেসার ছিলেন ধ্রুপদী। ইবাদত শুরুতে আজহার আলীকে শর্ট বলে ফেরান। খালেদ ভেতরে ঢোকানো বলে এলবিডব্লিউ করেন বাবরকে। দুজনে আউট করার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত লাইন ধরে রেখে ধারাবাহিক আক্রমণ করেছেন দুজন। উইকেট পাননি তবে সুযোগ তৈরি করার মতো বল করেছেন।

আলগা বল না করায় পাকিস্তানের রানও আটকে ছিল। তবে স্পিনাররা আসার পর ফাওয়াদ ও রিজওয়ান অনায়াসে রান তুলেছেন। তাতে পাকিস্তানের রান কাঁটায় কাঁটায় তিনশ পূর্ণ হয়। দুজনের ফিফটির পরই বাবর ইনিংস ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশের জন্য ৩০০ রানই যে যথেষ্ট তা পাকিস্তান বুঝে গেছে ভালোভাবেই। এজন্যই ৬ উইকেট নেওয়া সাজিদ বলে দিলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা দুইবার অলআউট করে ম্যাচটা জিততে চাই।’