৬ বছর ভাতা পাচ্ছেন না মুক্তিযোদ্ধা আমির হামজা (৭১)। মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। তারুণ্যে যে হাতে ছিল শত্রু নিধনের অস্ত্র, বৃদ্ধ বয়সে সেই হাতে তুলে নিয়েছেন লাঙল। অন্যের জমি চাষাবাদ করে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাচ্ছেন অসহায় এই মুক্তিযোদ্ধা।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নে বসবাসরত আমির হামজা ৭ মার্চ রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি ত্যাগ করেছিলেন। কমান্ডার কাছিম উদ্দিন দেওয়ানের নেতৃত্বে নেন অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ। এরই মধ্যে একটি যুদ্ধে পাকসেনারা অস্ত্র ফেলে পালিয়ে গেলে সেই অস্ত্র দিয়েই রণাঙ্গনে অংশ নেন আমির হামজা।
স্মৃতি হাতড়ে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ১১ নভেম্বর আঞ্চলিক বাহিনীর নেতা লতিফ মির্জার নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছি। সেদিন ছিল রোববার। রোজার দিন। অনেকে সেহরি খেয়েছে, অনেকে খায়নি। এরই মধ্যে শুরু হলো পাকসেনাদের গুলি। আমরাও পাল্টা জবাব দিচ্ছিলাম। ভোর থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলল যুদ্ধ। এদিন আমাদের হাতে কে ৯০ জন মিলিটারী মারা যায়। ৯ জনকে জীবিত ধরে শীতলাই পুকুরপাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সংসার জীবনে ৫ মেয়ে এবং এক ছেলের বাবা আমির হামজা। ৩ মেয়েকে বিয়ে দিলেও ২ মেয়ে এখন অবিবাহিতা। সংসার শুরু থেকেই অসচ্ছল। ২০০৬ সালের জুলাই মাস থেকে ভাতা পাওয়া শুরু করলে সংসারে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু ২০১৫ সালের আগস্ট মাস থেকে ভাতা পাচ্ছেন না তিনি।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মুক্তিবার্তায় নাম ঠিকানা সব আছে। কিন্তু সেখানে নাম্বার ছিল না। উল্লেখ রয়েছে দাবিদার। উপজেলায় যোগাযোগ করলে তাকে আবেদন নিয়ে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়। বৃদ্ধ বয়সে কয়েকবার তিনি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, গণভবনে গিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। তবে সম্প্রতি আমির হামজাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে- এবার তালিকাভুক্ত হবেন তিনি।
পলাশডাঙ্গা যুদ্ধ শিবিরের ফলকে আমির হামজার নাম রয়েছে, যুদ্ধ শেষে অস্ত্র জমা দিয়েছেন, আছে মুক্তিযোদ্ধার বিভিন্ন সনদ। গেজেটে নাম অন্তর্ভূক্তির জন্য এর আগে আবেদন করেছিলেন। তৎকালীন ইউএনও শফিকুল ইসলাম তাঁকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে প্রতিবেদনও দিয়েছেন। এত কিছুর পরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত কেন করা হচ্ছে না- প্রশ্ন আমির হামজার।
জানা গেছে, ভাতা বন্ধ হওয়ার কারণে একমাত্র ছেলে আওরঙ্গজেব সেলিমের কলেজের বেতন দিতে পারেননি তিনি। ৫ বছর আগে সেই যে ছেলে রাগ করে বাড়ি ছেড়েছে, আজও তার কোনো খবর পাননি। ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স পাশ করে বাড়িতে বসে আছেন মেয়ে মেরিনা খাতুন। আরেক মেয়ে শিরীনা খাতুন চাটমোহর সরকারি অনার্স কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে পড়ছেন।
আমির হামজা আক্ষেপ করে বলেন, ঘরে স্ত্রী সেলিনা খাতুনও অসুস্থ। তারও চিকিৎসা করাতে পারছি না। বৃদ্ধ বয়সে চারজনের সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করছি।