খেলাধুলা

মেলবোর্ন বিমানবন্দরে ‘আটক’ জোকোভিচ

রেকর্ড গড়া ২১তম গ্র্যান্ড স্লামের লক্ষ্য নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় গেছেন নোভাক জোকোভিচ। কিন্তু মেলবোর্ন বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ভিসা জটিলতায় পড়লেন সার্বিয়ান তারকা। অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যমের দাবি, অবৈধ কাগজপত্র নিয়ে দেশটিতে ঢুকেছিলেন তিনি।

মেলবোর্নের টুল্লামেরিন বিমানবন্দরে সারা রাত কাটাতে হয় জোকোভিচকে। পরে সীমান্ত বাহিনী ঘোষণা দেয়, দেশটিতে প্রবেশের নিয়মনীতি মানেননি বিশ্বের এক নম্বর টেনিস তারকা এবং তাকে সার্বিয়ায় ফেরত পাঠানো হবে। আপাতত মেলবোর্নের একটি কোয়ারেন্টাইন হোটেলে আছেন জোকোভিচ। বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) তাকে দেশে ফেরার বিমানে তুলে দেওয়া হবে।

অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’ তার টুইট, ‘জোকোভিচের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। নিয়ম নিয়মই, বিশেষ করে যখন আমাদের সীমান্তের ব্যাপার আসে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’

অস্ট্রেলিয়ান সীমান্ত বাহিনী বলেছে, অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের প্রমাণ দিতে পারেননি জোকোভিচ এবং তার ভিসা তাৎক্ষণিক বাতিল হয়েছে। দেশের নাগরিক যারা নয়, তারা যদি প্রবেশের জন্য বৈধ ভিসাধারী না হয় এবং যাদের ভিসা বাতিল হয়েছে তাদের আটক করে অস্ট্রেলিয়া থেকে অপসারণ করা হবে।’

ধারণা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের টিকা সংক্রান্ত ঝামেলায় জোকোভিচকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গত বছর সার্ব তারকা বলেছিলেন, তিনি টিকা নেওয়ার বিরোধী। তবে টিকা পরে নিয়েছিলেন নাকি নেননি সেটা জানা যায়নি। তবে টেনিস অস্ট্রেলিয়া টিকা ছাড়াই খেলোয়াড়দের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু সমস্যা বাঁধে দুবাই থেকে জোকোভিচ মেলবোর্নে আসার পর।

মরিসন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, টিকা ছাড়া খেলোয়াড়দের ঢুকতে দেওয়ার সুযোগ নেই এবং জোকোভিচ টিকা গ্রহণের ব্যাপারে যে প্রমাণ দিয়েছেন তা যথেষ্ট নয়।

স্থানীয় প্রতিবেদন বলছে, লিগ্যাল আপিল করতে পারেন জোকোভিচ কিংবা নতুন ভিসার আবেদন করে টুর্নামেন্টে অংশ নিবেন।

অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট বলেছেন, জোকোভিচের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা অনমনীয় হলেও ‘ন্যায্য’ এবং এই অস্ট্রেলিয়ান সরকারের অধীনে সবার জন্য এক নীতি।

তবে জোকোভিচের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের এমন আচরণ তার দেশ সার্বিয়ায় নিন্দার ঝড় তুলেছে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হওয়ার আশঙ্কা উঠেছে। জোকোভিচের বাবা সারজান জোকোভিচ বলেছেন, তার ছেলেকে বিমানবন্দরের একটি রুমে পুলিশি পাহারায় রাখা হয়েছিল। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটা শুধু নোভাকের জন্য লড়াই নয়, পুরো বিশ্বের জন্য লড়াই।’

সার্ব প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিচ বলেছেন, জোকোভিচ হেনস্থার শিকার এবং গোটা সার্বিয়া তার পাশে আছে। ইনস্টাগ্রামে তিনি বলেছেন, ‘আমি নোভাক জোকোভিচের সঙ্গে এই মাত্র ফোনালাপ করলাম। আমি তাকে বলেছি পুরো সার্বিয়া আপনার সঙ্গে আছে এবং বিশ্বের সেরা টেনিস খেলোয়াড়কে হেনস্থার ইতি টানতে আমাদের সরকার সবকিছু করছে। আন্তর্জাতিক আইনের সব ধারা মেনে সার্বিয়া নোভাক, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে লড়বে। নোভাক শক্ত আছে, যেমনটা আমরা সবাই জানি।’

সার্বিয়ান মিডিয়া বলছে, ভুচিচ বেলগ্রেডে অস্ট্রেলিয়ান অ্যাম্বাসেডরকে ডেকেছেন এবং জোকোভিচকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে খেলায় অংশ নিতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

আগামী ১৭ জানুয়ারি শুরু হবে এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। হাতে আছে ১১ দিন। এই কয়েক দিনের মধ্যে ৯ বারের চ্যাম্পিয়ন জোকোভিচ ও সার্ব সরকার কোনো সমাধানে আসতে পারেন কি না তা দেখার আশায় তার ভক্তরা।