খেলাধুলা

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের কীর্তি ঢাকা পড়ল ক্রাইস্টচার্চে

লম্বা টেস্ট ক্যারিয়ারে ব্যাটসম্যান হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত রস টেলর। এই ফরম্যাটে নিউ জিল্যান্ডের শীর্ষ রান সংগ্রাহক। ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় দিন ক্যারিয়ারের ১৭তম ওভারে বল হাতে নিলেন, যার নামের পাশে উইকেট দুটি। স্ট্রাইকে ছিলেন ইবাদত হোসেন, শেষ জুটিতে সঙ্গী তাসকিন আহমেদ। নতুন বল নেওয়ার আগে শেষ ওভার, সবাই বলাবলি করছিল তৃতীয় উইকেট নিয়েই কি বিদায়টা রাঙাবেন এই অফস্পিনার? কথা হয়তো কানে পৌঁছাল তার। তৃতীয় বলেই ইবাদতের উঁচু শট মিডউইকেটে লুফে নিলেন টম ল্যাথাম। ব্যস, ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারে (০-১) বিদায়ী টেস্ট ম্যাচ স্মরণীয় করলেন টেলর।

স্কোর: বাংলাদেশ: প্রথম ইনিংস- ১২৬; দ্বিতীয় ইনিংস ২৭৮ (ফলো অন), নিউ জিলান্ড: ৫২১/৬ (ডিক্লেয়ার)।

ফল: ইনিংস ও ১১৭ রানে জয়ী নিউ জিল্যান্ড। সিরিজ ১-১ এ ড্র।

আগের দশ ইনিংসে রানের খাতা খুলতে না পারা ইবাদত ৪ রানে আউট, তাতে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল ২৭৮ রানে। যে ইনিংসে লিটন দাসের সেঞ্চুরিতে প্রতিরোধ গড়েছিল বাংলাদেশ। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ইতিহাস গড়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্টে এই একটিই দর্শনীয় আর উল্লেখযোগ্য ইনিংস। ইনিংস ও ১১৭ রানে জিতে টেলরকে টেস্টে স্মরণীয় বিদায় এনে দিলো নিউ জিল্যান্ড, মাত্র তিন দিনের মধ্যে। হ্যাগলি ওভালে এই দিন উপস্থিত তার পরিবার।

১২৬ রানে প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ফলো অনে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে লিটনের ব্যাটে লড়াই করে। তৃতীয় সেশনে তার প্রতিআক্রমণ ছিল দিনের আলোচিত বিষয়। তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি যা একটু প্রতিরোধ এনে দিয়েছিল সফরকারীদের। তবে কাইল জেমিসন ও নিল ওয়াগনার সাতটি উইকেট ভাগাভাগি করে বাংলাদেশকে ইনিংসে হারাতে অবদান রাখেন।  

তবে বাংলাদেশ এই টেস্টে পরাজয়ের লজ্জা পেলেও প্রথমবার প্রাপ্তি নিয়ে নিউ জিল্যান্ড থেকে দেশে ফিরছে। এই প্রথম টেস্ট শেষ করল তারা সমতায় থেকে।

সকাল সকাল ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ তোপের মুখে পড়ে ১২৮ রানে পাঁচ উইকেট হারায়। তারপর লিটনের সঙ্গে নুরুল হাসান সোহানের ১০১ রানের জুটি। তাতে নিউ জিল্যান্ডকে চতুর্থ দিন মাঠে নামানোর ইঙ্গিত দিচ্ছিল সফরকারীরা।

লিটনের শুরুটা হয়েছিল ধীরগতির। ৪৬ বল খেলে প্রথম বাউন্ডারি মারেন। ৬৪ বলে যখন ৩৩ রানে পৌঁছান, তখন আগ্রাসী রূপ ধারণ করেন এই ব্যঅটসম্যান। জেমিসনের ৫৯তম ওভারে ১৭ রান নেন, দুটি বাউন্ডারি ও একটি ছয়ে। তারপর ট্রেন্ট বোল্টকে চারটি বাউন্ডারি মারেন। পয়েন্ট দিয়ে দর্শনীয় শটে চার মেরে হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছান এই বাঁহাতি পেসারের বলে।

ষষ্ঠ উইকেটের জুটি ১০০ পার হয়। কিন্তু আর একটি রান যোগ হওয়ার পর মিড অফে ওয়াগনারকে ক্যাচ দেন সোহান (৩৬)। ড্যারিল মিচেল ভেঙে দেন এই জুটি। মেহেদী হাসান মিরাজ ক্রিজে ছিলেন সাত ওভার, জেমিসনের বলে স্লিপে পঞ্চম ক্যাচ ধরেন ল্যাথাম। তবে লিটন একপ্রান্ত দিয়ে মারকুটে ছিলেন, পুল করে চার মেরে দ্বিতীয় শতকের পথে ছুটতে থাকেন। তারপর জেমিসনের ওভারে বাউন্ডারি ও দুটি রান নিয়ে পৌঁছান তিন অঙ্কের ঘরে। তারপর ইবাদত হোসেনের মতো স্যালুট।

শেষ পর্যন্ত জেমিসন বিদায় করেন লিটনকে। এলবিডব্লিউ হন ১১৪ বলে ১৪ চার ও ১ ছয়ে ১০২ রান করে। কিউই পেসার তার চতুর্থ উইকেট পান মিড অন থেকে দৌড়ে এসে টিম সাউদি শরিফুল ইসলামের ক্যাচ ধরে। তার দুই ওভার পর ইবাদত শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন।

৩৯৫ রানে পিছিয়ে থেকে ফলো অনে নেমে বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে সতর্ক শুরু করে। দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও মোহাম্মদ নাঈম নতুন বল সামলান রক্ষণাত্মক শটে। কিন্তু ৫৫ মিনিট যেতেই সাদমান (২১) জেমিসনের লেগসাইড অফে টম ব্লান্ডেলের কাছে কট বিহাইন্ড হন।

নাজমুল হোসেন শান্ত ক্রিজে এসে মারমুখী হন। ওয়াগনারকে তিন চার ও একটি ছক্কা মারেন। শেষ পর্যন্ত শান্তকে ফাইন লেগে বোল্টের ক্যাচ বানান এই কিউই পেসারই। অভিষেকে শূন্য রান করা নাঈমের ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের প্রতিরোধ ভাঙে ল্যাথাম দ্বিতীয় স্লিপে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরলে। সাউদির শিকার মুমিনুল হক, প্রথম স্লিপে টেলর ধরেন তার ক্যারিয়ারের ১৬৩তম ক্যাচ।

ইয়াসির আলী মাত্র ৯ বল খেলে বিদায় নেন ওয়াগনারের শর্ট বলে। নিউ জিল্যান্ডের পেস আক্রমণে ধস অব্যাহত থাকত, যদি না লিটন ও সোহান প্রতিরোধ গড়তেন। বাংলাদেশকে ২৭৮ রানে গুটিয়ে দিতে চার উইকেট নেন জেমিসন, তিনটি পান ওয়াগনার।

ম্যাচ বাঁচাতে পারলে সিরিজ জিতে ঘরে ফিরতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু ইনিংস ব্যবধানে হারল, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের কীর্তি চাপা পড়ল ক্রাইস্টচার্চে অসহায় আত্মসমর্পণে। তবে পরের নিউ জিল্যান্ড সফরে নিশ্চয় বুক ফুলিয়ে যাবে বাংলাদেশ।