ক্যাম্পাস

নোবিপ্রবিতে অণুজীববিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা 

চলছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। প্রাণ হারাচ্ছে বহু মানুষ, প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক হিসেবে আবিষ্কার হয়েছে ভ্যাক্সিন ও মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট। একটি ক্ষুদ্র অণুজীব করোনা, যা একটি ভাইরাস, খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়, কিন্তু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। 

এমন আরও অণুজীব রয়েছে, যা আকারে ক্ষুদ্র, খালি চোখে দেখা যায় না- যেমন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, শৈবাল, যাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক নিত্যদিনের। কেননা, এসব অণুজীব দ্বারা আমরা প্রতিনিয়ত জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছি এবং প্রতিষেধক হিসেবে আমরা এন্টিবায়োটিক, সিরাপ, ট্যাবলেট নিচ্ছি।

দৈনন্দিন জীবনে অণুজীবের এই রহস্যময় প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে, শিখতে ও জানাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে অণুজীববিজ্ঞান। এই অণুজীববিজ্ঞান হলো জীববিজ্ঞানের একটি শাখা, যেখানে অণুজীব নিয়ে আলোচনা করা হয়। অণুজীববিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে অণুজীবের চরিত্র, বংশবিস্তারের পদ্ধতি, ক্ষতিকর জীবাণু থেকে বাঁচার উপায়, উপকারী অণুজীব, অণুজীবের প্রভাব—ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করা যায়।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ৫ম বিভাগ হিসেবে ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করে মাইক্রোবায়োলজি (অণুজীববিজ্ঞান) বিভাগ। ইতোমধ্যেই বিভাগে ১১টি ব্যাচের শিক্ষা-কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অত্যন্ত সুনামের সাথে বিভাগটি তাদের শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে এখানকার শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য ফার্মাসিউটিক্যালস (স্কয়ার, ব্যাক্সিমকো, অপসোনিন, এসিআই, এসকেএফ, একমি, রেনাটা), গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইসিডিডিআরবি, বিসিএসআইআর) ও বিশ্ববিদ‌্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এছাড়াও এই বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সর্বোচ্চ সিজিপিএ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক, রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

যা পড়ানো হয়

অণুজীববিজ্ঞান বিষয়টি বিজ্ঞান অনুষদের অন্তর্ভুক্ত। এবিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে মূলত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, শৈবাল সম্পর্কে বিশদ পড়ানো হয়। অণুজীবের কোষীয় গঠন, শারীরতত্ত্ব, বংশগতি, বৃদ্ধি, বাস্তুসংস্থান, বিবর্তন, অণুজীব দ্বারা সংঘটিত রোগ, রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকারও অণুজীববিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়।

মাইক্রোবায়োলজি কোর্সের অধীনে জেনারেল মাইক্রোবায়োলজি, বেসিক টেকনিক অব মাইক্রোবায়োলজি, বেসিক বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবিয়াল ইকোলজি, বেসিক মাইক্রোবিয়াল জেনেটিক্স, ইমিউনোলজি, এনজাইমোলজি, এনভায়রনমেন্টাল, ফুড মাইক্রোবায়োলজি, মেডিক‌্যাল মাইক্রোবায়োলজি, সয়েল মাইক্রোবায়োলজি, এগ্রিকালচারাল মাইক্রোবায়োলজি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাসিউটিক্যালস মাইক্রোবায়োলজি, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, এনালিটিক্যাল, মাইক্রোবিয়াল, ব্যাকটেরিয়োলজি, কোয়ালিটি কন্ট্রল অব ফুড, ফিশ অ্যান্ড বেভারেজ ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়। এ কোর্সগুলোতে অধ্যয়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পরিবেশ, কৃষি, জৈবপ্রযুক্তি, পরিবেশ দূষণ রোধ, জ্বালানি, ওষুধ প্রস্তুতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অণুজীবের ভূমিকা ও ব্যবহার সম্পর্কে বিষদ জানা যায়।

কাজের ক্ষেত্র 

প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে অণুজীব নিয়ে কাজের সুযোগ ও নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। এবিষয়ে পড়ে হতে পারেন মাইক্রোবায়োলজিস্ট, কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার, সায়েন্টিস্ট, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ, প্রোডাক্ট স্পেশালিস্ট, ডায়াগনস্টিক স্পেশালিস্ট, গবেষক ও শিক্ষক। এসব পদে আইসিডিডিআরবি ও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফার্মাসিটিক্যালস প্রতিষ্ঠান, ভেকসিন প্রোগ্রাম, জনস্বাস্থ্যবিষয়ক প্রকল্প, খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, ডেইরি ফার্ম, বায়ো ইন্ডাস্ট্রি, পেপার ইন্ডাস্ট্রি, টেক্সটাইল মিল, পরমাণু শক্তি কমিশন, পাট গবেষণা কেন্দ্র, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, কৃষি ও পরিবেশ ক্ষেত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও দেশের বাইরে চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা বা গবেষক হিসেবে কাজ করার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে।

সর্বোপরি, অণুজীববিজ্ঞান একটি সম্ভাবনাময় বিষয়, কেননা মহাবিশ্বে অণুজীবের প্রকৃত সংখ্যা বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেননি এবং এবিষয়ে প্রতিনিয়ত হচ্ছে নতুন গবেষণা। নতুন তথ্য খুঁজে বের করতে কাজ করছে অণুজীববিদ ও অণুজীববিজ্ঞানীরা। মাইক্রোবায়োলজিতে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নতুন নতুন ওষুধ, ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের মাধ্যমে দেশ তথা মানুষের উপকারে কাজের সুযোগ রয়েছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)।