বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে অত্যন্ত উদ্বেগজনক হারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা রোগীর পরিমাণ বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে। ধীরে ধীরে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো পুরনো রূপে ফিরতে শুরু করেছে।
রাজধানীর তিনটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রোগী বেড়েছে দশ গুণ। ল্যাবএইড হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার ইফতেখার আহমেদ জানিয়েছেন, যেকোনো সময়ে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কায় তারা ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। আগের অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগাতে চান তারা। তাদের দুটি হাসপাতালে ৪২টি করোনা বেডের বিপরীতে এখন রোগী আছে ৩৫ জন।
রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের সিইও আল এমরান চৌধুরী জানান, মানুষ ঠিকমতো মাস্ক পরে না, স্বাস্থ্যবিধি মানে না। এজন্য প্রতিদিনই করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। তার হাসপাতালে করোনার ৬০ বেডের বিপরীতে রোগী আছেন ৪৫ জন।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিনের জন্য কঠোর লকডাউন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আল এমরান চৌধুরী।
করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২১ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১৪ জানুয়ারি ৪ হাজার ৩৭৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। ১৫ জানুয়ারি ৩ হাজার ৪৪৭ জনের, ১৬ জানুয়ারি ৫ হাজার ২২২ জনের, ১৭ জানুয়ারি ৬ হাজার ৬৭৬ জনের, ১৮ জানুয়ারি ৮ হাজার ৪০৭ জনের, ১৯ জানুয়ারি ৯ হাজার ৫০০ জনের, ২০ জানুয়ারি ১০ হাজার ৮৮৮ জনের এবং ২১ জানুয়ারি ১১ হাজার ৪৩৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়।
এদিকে, সংক্রমণের পাশাপাশি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে দিন দিন রোগী বাড়ছে। ৫০০ শয্যার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, সোমবার (২৪ জানুয়ারি) হাসপাতালটিতে কোভিড রোগীদের জন্য নির্ধারিত ২৭৫টি সাধারণ শয্যার মধ্যে রোগী আছে ২১৯ জন। শয্যা খালি ৫৬টি। ১০টি আইসিইউ’র মধ্যে আটটিতেই রোগী আছে। ১৫টি এইচডিইউ শয্যার মধ্যে ১০টিতে রোগী আছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ইউনিট-২ ও বার্ন ইউনিটে গত মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত তেমন রোগী দেখা না গেলেও বর্তমান অবস্থা ভিন্ন। ক্রমে পুরনো অবস্থায় ফিরছে হাসপাতালটি। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত এই হাসপাতালের কোভিড সাধারণ শয্যার বিপরীতে রোগী আছে ৩২৪ জন। ৪৮৫টি সাধারণ শয্যার মধ্যে এখনও খালি রয়েছে ১৬৪টি। এখানে ২০টি আইসিইউর মধ্যে খালি আছে ৩টি। ৪০টি এইচডিইউ শয্যার মধ্যে ১৪টি খালি আছে।
প্রতিদিন যে হারে করোনা রোগী বাড়ছে, তা ঠেকাতে আবারও লকডাউন দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না? এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আগেরবার দেখেছি লকডাউন দেওয়াতে সংক্রমণ কমেছে। বর্তমানে যে অবস্থা অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য কঠোরভাবে লকডাউন দেওয়া উচিত।’
অপরদিকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বরেন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি মনে করি না দেশে লকডাউন দেওয়ার সময় এসেছে। তবে, সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এর বিকল্প নেই।’
লকডাউন প্রশ্নে ডা. আ প ম সোহরাবুজ্জামান বলেন, ‘লকডাউনের চেয়ে বড় কথা, দেশের মানুষকে স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষিত করতে হবে। লকডাউন দিয়ে সাময়িকভাবে সংক্রমণ আটকানো যাবে, কিন্তু সচেতন না করা গেলে আবারও সংক্রমণ বাড়বে।’
ডা. মাহমুদা হোসেন মিমি বলেন, ‘আরও অন্তত ১৫ দিন আগেই লকডাউন দেওয়া উচিত ছিল। মানুষ যেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, তাই অবশ্যই ন্যূনতম দুই সপ্তাহের জন্য লকডাউন দেওয়া দরকার।’
অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, ‘সংক্রমণ গাণিতিক হারে বাড়ছে। বেশিরভাগই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন। এটা ততটা ক্ষতিকারক না। তবে, কেউ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে কিন্তু তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। সেটা নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল কোর্ট বসিয়ে জরিমানা ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাতেও কাজ না হলে লকডাউনের কোনো বিকল্প নেই।’