গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে অসুস্থ আরও একটি জেব্রাটিও মারা গেছে। এ নিয়ে একদিনে সেখানে দুটি জেব্রা মারা গেলো।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার কিছু সময় পর অসুস্থ জেব্রাটি মারা যায়। একইদিন সকালে অসুস্থ অবস্থায় অপর একটি জেব্রার মৃত্যু হয়। তবে মারা যাওয়া জেব্রা দুটি মাদী না পুরুষ তা জানা যায়নি। এ পর্যন্ত সাফারি পার্কে ২ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ১১টি জেব্রা মারা গেল।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবির।
জাহিদুল কবির জানান, শনিবার সকালে জেব্রা পালের দুটি জেব্রা অসুস্থ হয়ে পড়ে যায়। তাৎক্ষণিক দুটি জেব্রাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এর মধ্যে সকালে একটি ও সন্ধ্যায় অপর একটি জেব্রা মারা যায়। বিশেষজ্ঞ টিম পার্কে পৌঁছে মৃত্যু রোধে করণীয় ও মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে কাজ শুরু করেছেন।
তিনি আরও জানান, ২ জানুয়ারি থেকে পার্কে জেব্রা মৃত্যু শুরু হয়। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত ৯টি জেব্রা মারা যায়। জেব্রাগুলোর মৃত্যুতে ৬ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। পরে ২৫ জানুয়ারি পার্কে তাদের নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়।এতে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি অনুষদের অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নুর আলী খান, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারী ও অবস্টেট্রিকস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল আলম, ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. কাজী রফিকুল ইসলাম, ঢাকার কেন্দ্রীয় পশু হাপসপাতালের সাবেক প্রধান ভেটেরিনারী অফিসার ও ঢাকা চিড়িয়াখানার সাবেক কিউরেটর ডা. এবিএম শহীদ উল্লাহ, গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.এসএম উকিল উদ্দিন এবং সাফারি পার্কের ভেটেরিনারী অফিসার ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইন। বৈঠক শেষে বিকেলে ব্রিফিংয়ে জেব্রার মৃত্যুর কারণ ও কিছু দিক নির্দেশনামূলক পরামর্শ প্রদান করেন গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি।
পরে বিকেলে সভা শেষে পার্ক প্রকল্পের পরিচালক মো. জাহিদুল কবির ও বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্য মো. শহীদুল্লাহ ওইসব জেব্রার মৃত্যুর কারণ ও পার্কের পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাত ধরণের পরামর্শ দেন।
তারা জানান, অতিরিক্ত কাঁচা ঘাস ছাড়াও স্ট্রেপ্টোকক্কাস, ই—কোলাই, কস্নস্টোডিয়াম, সালমোনিলা ও পাস্টুরেলা নাম ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ৫টি এবং নিজেদের মধ্যে মারামারি করে আরো চারটি জেব্রা মারা গেছে।
পার্ক পর্যবেক্ষণ শেষে তারা যে পরামর্শগুলো দিয়েছেন তা হলো জেব্রার বসতির জায়গার মাটি ওলট পালট করে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে জীবানু ধ্বংস করতে হবে, সাফারী পার্কের জলাধারের পানি পরিবর্তন করতে হবে, জেব্রাগুলোকে টিকার আওতায় আনতে হবে, জেব্রার খাবার হিসেবে পরিপক্ক ঘাসের ব্যবস্থা করতে হবে, শুকনা খাবার ফাঙ্গাসমুক্ত করে পরিবেশন করতে হবে, ঘাস পানিতে ভালো করে ধৌত করে কেটে পাত্রে পরিবেশন করতে হবে, এসব প্রাণী বেস্টনীতে বায়োসিকিউরিটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, অতিরিক্ত নিরাপত্তা কমীর্র ব্যবস্থা রাখতে হবে, পার্কের অভ্যন্তরে পতিত জমিতে ঘাস উৎপাদন করে খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে, নাইট ভিশন ক্যামেরাসহ পুরো বেস্টনীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।