২০১৭ সালের ১৪ মে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রথম জেব্রা শাবকের জন্ম হয়। সেই থেকে ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২৫টি শাবকের জন্ম হয়। এর মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে মারা যায় ১০টি জেব্রা।
চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আরও ১১টি জেব্রার মৃত্যু হয়। তবে পার্কে ২৫টি শাবকের জন্ম হলেও মোট মারা গেছে ৩২টি জেব্রা। জেব্রার পাল সমৃদ্ধ হলেও কমে এখন সংখ্যায় দাঁড়িয়েছে ১৮টিতে।
এ পার্কে ২০১৩ সালের ২১ জুন প্রথম ফ্যালকন ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয় তিনটি পুরুষ ও তিনটি মাদির জেব্রা। পরে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আরও ১৯টি জেব্রা পার্কে আনা হয়। কিন্তু নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে না পেরে ২০১৫ সালের মধ্যে ১১টি জেব্রার মৃত্যু হয়।
পার্ক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাজীপুরের এই সাফারি পার্কে বিশাল শাল বনের ভেতর জেব্রার বিচরণ। জেব্রার সঙ্গেই রয়েছে ওয়াইল্ড বিস্ট ও জিরাফসহ নানা দেশি-বিদেশি প্রাণী। এবারের ১১টি জেব্রার মৃত্যুর আগেও পার্কে আরও একবার জেব্রার পালে এমন মড়ক লেগেছিল। কর্তৃপক্ষ তখন সচেতন হলে এভাবে এতোগুলো জেব্রার প্রাণ দিতে হতো না। বিদেশি প্রাণী হওয়ায় এ দেশে জেব্রার চিকিৎসা ও রোগ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় এমন বিপর্যয়ে পড়তে হয়েছে। দেশের চিকিৎসকরা বেশ কয়েকদিন হয়ে গেলেও এর সঠিক কারণ উদ্ঘাটনে হিমশিম খাচ্ছেন।
এদিকে, যেখান থেকে এ প্রাণীগুলো আনা হয়েছিল সেখানেও (দক্ষিণ আফ্রিকা) পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেব্রার মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে ভ্যাকটেরিয়া সংক্রমণকে দায়ী করা হচ্ছে। তাদের ধারণা খাবারের কারণেই এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। তাই বিভিন্নভাবে খাবার পরিবর্তন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা এমন মোড়ক রোধে ১০ দফা বাস্তবায়নের যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা চেষ্টা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে বেশ কয়েক দফা বাস্তবায়নও হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটিও তাদের কাজ করছে। এ বিষয়ে সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল কবির বলেন, আমরা সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছি। তবে তাদের বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি। এটাতে কারও কোনো হাত নেই। আমাদেরও কোনো অবহেলা নেই। জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এই পার্কটি আমাদের গর্ব। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টায় পার্কটির ব্যবস্থাপনা করে যাচ্ছি। এরপরও হতাশ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে গেলো। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন বিভাগের প্রধান বনসংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, সোমবার (৩১ জানুয়ারি) ১১টি জেব্রা ও একটি বাঘের মৃত্যুর ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বনসংরক্ষক তবিবুর রহমান এবং ভেটেরিনারি অফিসার ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত কাজ সঠিকভাবে করতে তাদেরকে বন অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবিবুর রহমানের জায়গায় ফরিদপুর বন বিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক রফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইনের জায়গায় কক্সবাজারের চকোরিয়ার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
সাফারি পার্কে ৯ জেব্রার মৃত্যুর কারণ উদঘাটন
২২ দিনে ৯ জেব্রার মৃত্যু, বিশেষজ্ঞদের বৈঠক আজ
৯ জেব্রার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি
সাফারি পার্কে জেব্রা শাবকের জন্ম